ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফোন বন্ধ থাকলেও রক্ষা নেই! গোপনে ডেটা চুরি করে আদালতের মুখোমুখি গুগল

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ৮ জুন ২০২৫

ফোন বন্ধ থাকলেও রক্ষা নেই! গোপনে ডেটা চুরি করে আদালতের মুখোমুখি গুগল

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে "তথ্য" মানেই সোনা, আর গুগলের হাতে সেই সোনার পাহাড়। কিন্তু এই তথ্য জোগাড়ের পেছনে যদি থাকে প্রতারণা বা গোপনে নজরদারি তবে সেটা শুধু প্রযুক্তি নয়, আইনের মুখোমুখিও হতে হয়। এবার এমনই এক ভয়াবহ অভিযোগে আদালতের কাঠগড়ায় উঠছে গুগল।

ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে শুরু হতে যাচ্ছে একটি ঐতিহাসিক ট্রায়াল, যেখানে প্রায় ১৪ মিলিয়ন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, তাদের ফোন বন্ধ থাকা অবস্থাতেও গুগল তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছে। শুধু তথ্য নয়, গোপনে তাদের মোবাইল ডেটাও ব্যবহৃত হয়েছে—সব কিছুই হয়েছে গুগলের নিজস্ব স্বার্থে।

এ মামলা কেবল ক্যালিফোর্নিয়াতেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে গুগলের বিরুদ্ধে এমন আরও ডজনখানেক ক্লাস অ্যাকশন মামলা চলছে। মোট দাবি উঠতে পারে দশ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

গুগলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অ্যান্ড্রয়েড ফোন বন্ধ থাকার পরেও ফোন থেকে তথ্য পাঠানো-গ্রহণ বন্ধ হয়নি। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের না জানিয়ে তাদের ডেটা খরচ করিয়ে গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যবসা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে, যার বাৎসরিক আয় ২০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

গুগল এ ব্যাপারে সরাসরি দোষ অস্বীকার না করে বলেছে, ব্যবহারকারীরা ফোন চালু করার সময় যে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে সম্মতি দেয়, তাতেই ‘প্যাসিভ ডেটা কালেকশন’-এর অনুমতি রয়েছে। তবে আইনজীবীরা বলছেন, ফোন বন্ধ থাকলে এমন তথ্য সংগ্রহের কোনও নৈতিক বা আইনি ভিত্তি নেই।

এ মামলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ব্যক্তিগত ফোনের ডেটা আসলে কি আইনের চোখে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে? যদি না হয়, তাহলে গুগলের এমন আচরণকে অবৈধ প্রমাণ করা কঠিন হবে।

এ বিষয়ে মামলার প্রধান আইনজীবী জর্জ জেলকস বলেন, “ব্যবহারকারীরা তাদের চালু ফোনের অ্যাপ থেকে তথ্য সংগ্রহ নিয়ে আপত্তি করছেন না। সমস্যা হলো, ফোন বন্ধ থাকা অবস্থায়ও গুগল তাদের ব্যক্তিগত ডেটা চুরি করে বিজ্ঞাপন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে—তাও ব্যবহারকারীদের অজান্তে।”

সাধারণত গুগল এরকম ক্ষেত্রে কোটি কোটি ডলার দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করে ফেলে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। মামলার টাইমলাইন ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রসারিত, আর ভুক্তভোগীর সংখ্যা লাখে নয়, মিলিয়নে। তাই কোনো আপসনামা হলেও তা হতে পারে ‘দশ বিলিয়নের বেশি’ টাকার ব্যাপার।

তথ্যযুদ্ধের এই যুগে গুগলের বিরুদ্ধে এমন মামলার রায় শুধু অর্থনীতিক নয়, প্রযুক্তি এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার দিক থেকেও হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

মিমিয়া

×