ছবি:সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং আর্থিক শৃঙ্খলার অভাবে আবারও বিনিয়োগকারীদের কাছে নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে স্বর্ণ। ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ এবং ২০২৫ সালেও তা আরও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গোল্ড ফোকাস রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরে স্বর্ণের গড় মূল্য ৩,২১০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। এমনকি তা সর্বোচ্চ ৩,৯০০ ডলার পর্যন্তও ছুঁয়ে যেতে পারে, যা ১৯৮০ সালের বাস্তব-মূল্যের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যাবে।
ফিলিপ নিউম্যান, মেটালস ফোকাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বলেন, “ম্যাক্রোইকোনমিক অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের প্রতি আগ্রহ ধরে রাখবে। আমরা রেকর্ড মূল্যের প্রত্যাশা করছি।”
২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো রেকর্ড ১,০৮৬ টন স্বর্ণ কিনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ বৃদ্ধি, ডলারের ওপর আস্থার অভাব এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের কারণে নতুন করে বাণিজ্য উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় স্বর্ণকে এখন অনেক দেশ ‘নন-লাইয়াবিলিটি রিজার্ভ অ্যাসেট’ হিসেবে দেখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারা ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকবে। পশ্চিমা বিশ্বে চাহিদা কিছুটা কমলেও, ভারত ও চীনে স্বর্ণের চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বাজারে চাহিদা উর্ধ্বমুখী।
স্টেট স্ট্রিট গ্লোবাল অ্যাডভাইজরসের স্বর্ণ কৌশলবিদ জর্জ মিলিং-স্ট্যানলি বলেন, “বর্তমান উত্থান মুদ্রাস্ফীতির নয়, বরং অনিশ্চয়তার প্রতিফলন। গত বছর যেখানে স্বর্ণের ভিত্তিমূল্য ছিল ২,০০০ ডলার, এখন তা ৩,০০০-এর ওপরে। এটি বিশাল অগ্রগতি।” তার মতে, স্বর্ণ এখন ৩,০০০–৩,৫০০ ডলারের মধ্যে স্থিতি ধরে রেখে ভবিষ্যতে ৩,৯০০ ডলার স্পর্শ করতে পারে।
গত তিন বছরে স্বর্ণের বার্ষিক গড় রিটার্ন দাঁড়িয়েছে ২১.৪ শতাংশ, যেখানে ১৯৭১ সাল থেকে গড় ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। মুনাফার চেয়ে ঝুঁকিমুক্ত আশ্রয়ের দিকেই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি।
তবে সাময়িকভাবে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে সতর্ক করেছে *কোয়ান্ট মিউচুয়াল ফান্ড*। তারা বলছে, আগামী দুই মাসে স্বর্ণের দামে ১২–১৫ শতাংশ সংশোধন হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণের সম্ভাবনা অটুট।
বাট ও কয়েন কেনাবেচায় সাময়িক স্থবিরতা থাকলেও, ইটিএফ ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ স্থিতিশীল। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা ও ডলার-নির্ভরতাজনিত ঝুঁকি যতদিন থাকবে, ততদিন স্বর্ণের দাম বাড়তেই থাকবে।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, “স্বর্ণ এখন শুধু মুনাফার মাধ্যম নয়, বরং এক নতুন আর্থিক যুগের সূচক। ৩,৯০০ ডলার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
আঁখি
