
ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমানে শরিয়াহ ভিত্তিক উপায়ে বিনিয়োগ নিয়ে অনেকের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে ট্রেজারি বন্ড নিয়ে আমাদের একটি এক্সপ্লেইনারে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, কীভাবে সুকুকে বিনিয়োগ করা যায় এবং সুকুক ছাড়াও শরিয়া ভিত্তিক আর কী কী বিকল্প রয়েছে।
সুকুক: শরিয়াহভিত্তিক 'ইসলামিক বন্ড'
সুকুক মূলত শরিয়া সম্মত একটি বিনিয়োগ পণ্য, যা কাঠামোর দিক থেকে বন্ডের মতো হলেও মূল পার্থক্য হলো—এটি সুদের ভিত্তিতে নয়, বরং প্রকল্পভিত্তিক মুনাফার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ, সুকুকের মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয় তা নির্দিষ্ট অবকাঠামো বা প্রকল্পে বিনিয়োগ হয়, যার লাভের অংশ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বণ্টন করা হয়।
সরকার ২০২০ সাল থেকে একাধিক প্রকল্পের জন্য সুকুক ইস্যু করছে। সম্প্রতি গ্রামগঞ্জে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৩,০০০ কোটি টাকার সুকুক ইস্যুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে দেশের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে প্রবাসী বাংলাদেশি, ইসলামিক ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পক্ষ বিনিয়োগ করতে পারবে।
বিশেষ করে প্রবাসীরা তাদের অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব (NRFC) বা অনিবাসী টাকায় (NITA) এই সুকুকে বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে মুনাফাসহ সেই অর্থ বিদেশেও নিয়ে যেতে পারবেন।
সুকুকে বিনিয়োগ করবেন যেভাবে
সুকুকে বিনিয়োগ করতে হলে শরিয়া ভিত্তিক ব্যাংকে একটি হিসাব খুলতে হবে। এরপর ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে। প্রয়োজন হবে ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র ও নমিনির তথ্য জমা দেওয়ার।
সরকারি সুকুক ছাড়াও কিছু বেসরকারি কোম্পানিও সুকুক ইস্যু করেছে। যেমন বেক্সিমকো, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সুকুকের মাধ্যমে অর্থ তুলেছে। তবে বেসরকারি কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন। কোম্পানির আর্থিক ইতিহাস, পরিচালন কাঠামো ও সঠিক তথ্য যাচাই করে তবেই বিনিয়োগ করা উচিত।
সুকুক ছাড়া আরও যেসব শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে
শরিয়া ভিত্তিক শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ:
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) একটি শরিয়া সূচক প্রকাশ করে, যেখানে এমন সব কোম্পানি তালিকাভুক্ত যেগুলো শরিয়া ভিত্তিকভাবে পরিচালিত হয়। এসব কোম্পানির শেয়ারে আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন।
ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড:
বাংলাদেশে বেশ কিছু শরিয়া ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ড চালু রয়েছে। এসব ফান্ড একটি শরিয়া বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী শরিয়া সম্মত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে এবং বছর শেষে লাভ বণ্টন করে। তবে এটি কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হলেও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে ধরা হয় কারণ দক্ষ ম্যানেজারদের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিনিয়োগ হয়।
ইসলামিক ব্যাংকের ডিপোজিট প্রোডাক্ট:
শরিয়া ভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন মেয়াদের এমটিডিআর বা ডিপোজিট স্কিম রয়েছে, যেগুলোতে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ রেখে নির্ধারিত মুনাফা পেতে পারেন। এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও স্থিতিশীল আয়ের উৎস হতে পারে।
শরিয়াহ ভিত্তিক বিনিয়োগ শুধু ধর্মীয় চেতনাতেই নয়, নিরাপদ এবং প্রকল্পভিত্তিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একটি কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে যেকোনো বিনিয়োগের আগে প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি।
নুসরাত