ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদের রাতে বৈরুতে আগুন ঝরালো ইসরায়েল: লেবাননের তীব্র প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ০১:৩২, ৭ জুন ২০২৫

ঈদের রাতে বৈরুতে আগুন ঝরালো ইসরায়েল: লেবাননের তীব্র প্রতিবাদ

ঈদুল আযহার আগের রাতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তারা দাবি করেছে, হিজবুল্লাহর ড্রোন তৈরির ঘাঁটি লক্ষ্য করেই এ হামলা চালানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে এই হামলার আগে ওই অঞ্চলের কয়েকটি ভবন খালি করার জন্য বাসিন্দাদের সর্তক করা হয়। হামলার লক্ষ্য ছিল বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চল দাহিয়াহ, যেখানে হিজবুল্লাহর কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে চলে। যদিও হামলায় কোনো হতাহতের খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানায়, তারা এমন একটি ইউনিট শনাক্ত করেছে যারা ‘হাজার হাজার’ ড্রোন তৈরি করছিল এবং যার অর্থায়ন করছে ‘ইরানি সন্ত্রাসীরা’। হামলার লক্ষ্য সেই ড্রোন উৎপাদনকারী ইউনিট।

হামলার সময় ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ছয় মাস ধরে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকর ছিল। হামলার পর লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, "এটি আমাদের দেশ, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতির বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত আক্রমণ, বিশেষ করে ঈদের প্রাক্কালে ও পর্যটন মৌসুমের শুরুতে।"

হামলার আগে হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কে দাহিয়াহ এলাকার সরু রাস্তাগুলো ছেড়ে পালাতে গিয়ে ট্রাফিক জ্যামে পড়েন। এরপর আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়।

লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেন, "এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং পবিত্র ধর্মীয় উৎসবের প্রাক্কালে সংঘটিত হয়েছে।"

জাতিসংঘের লেবানন বিষয়ক বিশেষ সমন্বয়ক অফিসও হামলাকে ঈদের আগে "আতঙ্ক ও ভয়ের নতুন তরঙ্গ" সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করে। এই অফিসের প্রধান জেনিন হেনিস কূটনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, "বিতর্ক বা হুমকি সমাধানে সংলাপ ও কূটনীতি অপরিহার্য, যাতে অপ্রয়োজনীয় ও বিপজ্জনক সংঘর্ষ এড়ানো যায়।"

অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ এই হামলাকে “নির্ভুলভাবে সম্পন্ন” বলে প্রশংসা করে বলেন, লেবাননের সরকারই অস্ত্রবিরতির লঙ্ঘন এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী।

ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, হিজবুল্লাহ যেভাবে ড্রোন ব্যবহার করছে তা "ইসরায়েল-লেবাননের মধ্যে বিদ্যমান সমঝোতার সরাসরি লঙ্ঘন।" তবে হিজবুল্লাহ এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

হামলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আরবি মুখপাত্র আবিচাই আদ্রেয়ি হাদাত, হারেত হ্রেইক এবং বরজ আল-বারাজনের বাসিন্দাদের ভবন খালি করার নির্দেশ দেন। এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি হিজবুল্লাহর অবকাঠামোর পাশ্ববর্তী ভবনগুলো চিহ্নিত করেন।

২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ ১৩ মাস ধরে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল, যার ফলে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে ব্যাপক বোমা হামলা ও স্থল অভিযানে অংশ নেয়।

লেবাননের মতে, এই হামলাগুলোতে প্রায় ৪,০০০ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং ১২ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। অপরদিকে ইসরায়েল জানায়, তাদের ৮০ জন সৈন্য এবং ৪৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

২০২৩ সালের নভেম্বরে একটি অস্ত্রবিরতির চুক্তি হয়, যেখানে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করে এবং লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণে দায়িত্ব নেয়। তবে ইসরায়েল এবং লেবানন উভয়ই নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার সংরক্ষণ করেছে।

এই সাম্প্রতিক হামলার পর লেবানন সেনাবাহিনী অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ কমিটির সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্ব আংশিকভাবে স্থগিত রাখার হুমকি দিয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিলেও ইসরায়েল একই এলাকায় "নির্ভুল নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র" মজুদে হিজবুল্লাহর একটি ঘাঁটিতে হামলা চালায়। একই মাসে হিজবুল্লাহর এক কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হন, যা লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রক নিশ্চিত করে।

লেবানন সরকার এসব হামলা ও দক্ষিণে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতিকে অস্ত্রবিরতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।

Jahan

×