ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মাস্ক-ট্রাম্প দ্বন্দ্বে কেন আলোচনায় অ্যাপস্টেইন কেলেঙ্কারি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৭ জুন ২০২৫

মাস্ক-ট্রাম্প দ্বন্দ্বে কেন আলোচনায় অ্যাপস্টেইন কেলেঙ্কারি

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের এক বিস্ফোরক দাবি নতুন করে আলোচনায় এনেছে বিতর্কিত ‘অ্যাপস্টেইন ফাইলস’-কে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, ‘এবার সময় এসেছে বড় বিস্ফোরণের—অ্যাপস্টেইন ফাইলসে ট্রাম্পও আছেন।’ তার এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বহুদিনের বন্ধুত্বে ফাটল ধরিয়েছে।

মাস্কের এই দাবি প্রকাশের পর ট্রাম্প কড়া ভাষায় পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি মাস্ককে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ উল্লেখ করে বলেন, ‘এ ধরনের ভিত্তিহীন এবং উন্মাদনার অভিযোগ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।’

ট্রাম্প ও মাস্কের সম্পর্ক একসময় ঘনিষ্ঠ ছিল। ট্রাম্পের বর্তমান মেয়াদে মাস্ক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ নামে একটি বিতর্কিত প্রকল্পে জড়িত ছিলেন এবং অর্থায়নেও ভূমিকা রাখেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মাস্ক ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কড়া সমালোচনা করেন, বিশেষ করে একটি সরকারি বিলকে “জনগণের ওপর ঋণের বোঝা চাপানোর হাতিয়ার” বলে মন্তব্য করেন।

অ্যাপস্টেইন ফাইলস: কী রয়েছে এতে?
জেফরি অ্যাপস্টেইন ছিলেন একজন ধনকুবের মার্কিন ব্যবসায়ী, যিনি বহু বছর ধরে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন পাচার ও নির্যাতনের অভিযোগে আলোচিত ছিলেন। প্রথমবার ২০০৮ সালে মাত্র ১৩ মাস কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান। তবে ২০১৯ সালে নতুন করে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিউইয়র্কের একটি জেলে তার মৃত্যু হয়। সরকারিভাবে এটি আত্মহত্যা বলা হলেও, তাতে নজরদারির ঘাটতি ও কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ ওঠে।

অ্যাপস্টেইনের মৃত্যুর পর হাজার হাজার নথি জনসমক্ষে আসে, যেগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে আসে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এসব ফাইলের সর্বশেষ অংশ প্রকাশিত হয়। এতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রিন্স অ্যান্ড্রু, ম্যাজিশিয়ান ডেভিড কপারফিল্ড এবং মাইকেল জ্যাকসনের নামও আসে।

এক ভুক্তভোগী দাবি করেন, তিনি ট্রাম্পের অ্যাটলান্টিক সিটি ক্যাসিনোতে অ্যাপস্টেইনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অনৈতিক আচরণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অ্যাপস্টেইনের সঙ্গে ট্রাম্পের বন্ধুত্ব শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে। তাদের নিউইয়র্কের বিভিন্ন অভিজাত আয়োজনে একসঙ্গে দেখা যেতেন। ২০০২ সালে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘অ্যাপস্টেইন একজন দারুণ লোক এবং সে তরুণী নারীদের প্রতি আকৃষ্ট।’ তবে ২০০৪ সালের পর একটি রিয়েল এস্টেট নিয়ে মতবিরোধের জেরে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

মৃত্যুর আগে অ্যাপস্টেইন ট্রাম্পকে ‘ভয়ংকর মানুষ’ এবং ‘অশিক্ষিত’ বলে অভিহিত করেন। ট্রাম্প অবশ্য বরাবরই দাবি করে আসছেন, অ্যাপস্টেইনের অপরাধের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই এবং তিনি তদন্তে সহযোগিতা করেছেন।

২০১৪ সালে ইলন মাস্ককেও অ্যাপস্টেইনের সহযোগী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে একটি পার্টিতে দেখা যায়। ম্যাক্সওয়েল ২০২২ সালে যৌন পাচারে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড পান এবং ২০২৪ সালে তার আপিল খারিজ হয়ে যায়।

ইলন মাস্কের সাম্প্রতিক অভিযোগ ট্রাম্পের আসন্ন নির্বাচনী প্রচারণা ও জনসমর্থনে কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের আগুন জ্বালিয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মুমু ২

×