
ছবিঃ সংগৃহীত
সিলেটে প্রায় ৭০ হাজার গরুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে ছাগলের চামড়া কেনা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহজাহান এমন তথ্যই নিশ্চিত করে বলেন, বছরের পর বছর ঢাকায় ট্যানারিতে সিলেটের ব্যবসায়ীদের চামড়ার কোটি কোটি টাকা আটকে থাকে। সেসব টাকা সময়মতো না দেওয়াতে মালামাল সংগ্রহ ও সরবরাহ বাড়ানো যাচ্ছে না। যে কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আশঙ্কাজনকভাবে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কমেছে। আগে সমিতির অধীনে অন্তত তিন শতাধিক ব্যবসায়ী ছিলেন। এখন কমে এসেছে ২০/২৫ জনে। আর ঈদ এলে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদেরও আবির্ভাব ঘটে।
‘ইচ্ছেমতো’ দর নির্ধারণ, প্রতিকূল আবহাওয়া ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে থাকায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। এতে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের এমন অনাগ্রহের কারণে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়তে পারেন। এতে বড় ধরনের ধস নামতে পারে চামড়া ব্যবসায়। তবে চামড়ার দাম কম কিংবা নষ্ট করে ফেলা হলেও বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চামড়ার জুতার দাম আকাশচুম্বি।
চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, গত ১৫ বছর ধরে সিন্ডিকেটে জিম্মি চামড়া ব্যবসা। ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে সিলেটের ব্যবসায়ীদের বড় অঙ্কের টাকা বকেয়া রয়েছে। এর বাইরে সিলেটে বৃষ্টিপাতের কারণে অনুকূল আবহাওয়া নেই। এ অবস্থায় চামড়া ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না তাদের অনেকে।
জানা গেছে, এ বছর সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা। গতবছর যা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল। ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনবেন, গত বছর এই দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে, যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা। এ বছর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দামের পাশাপাশি ছোট গরুর আয়তন হিসেবে লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ঢাকার বাইরে ১১৫০ বা ১২শ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার সিলেট জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা এক লাখ দুই হাজার। কোরবানির পর প্রতিবছরই পশুর চামড়া সংগ্রহের পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার ট্যানারিগুলোতে বিক্রি করেন।
শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ শাহীন আহমদ বলেন, ঢাকায় ট্যানারি মালিকদের কাছে সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। কেবল ব্যবসায়ী নয়, অনেক মাদরাসার চামড়ার টাকাও বকেয়া রয়েছে। অথচ তারাই সরকার থেকে সুযোগ-সুবিধা পায়।
প্রতিবছর এক/দেড়শ’ কোটি টাকা ঋণ পেয়ে নিজেরা অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। এবছরও ব্যাংক থেকে তাদের লোন দেওয়া হয়েছে। আর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে সরকার থেকে ২১ কোটি টাকার লবণ দিয়েছে সারা দেশে। সিলেটেও লবণের ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ এলেও তা দেওয়া হয়েছে মাদরাসাগুলোতে। আমাদের কোনো লবণ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, লবণ বরাদ্দ পাওয়া মাদরাসাগুলো ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে লবণ বিক্রি করতে। অথচ ব্যবসায়ীদের এই লবণ বরাদ্দ দিলে চামড়া একটু দাম দিয়ে কিনলেও সমস্যা হতো না।
সমিতির সেক্রেটারি এসএম শাহজাহান আরও বলেন, গত বছরের এক কোটি টাকা এখনও ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে আছে। এ কারণে নতুন করে বিনিয়োগ করার আগ্রহ অনেকের নেই। তবুও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে যতটুকু সম্ভব বিনিয়োগ করছেন তারা।
ইমরান