ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শত্রুতার বলি দুই পুকুরের মাছ, বিষাদের ঈদ কামালের পরিবারে

আবু রাইহান, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ)

প্রকাশিত: ২০:১৯, ৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:২০, ৭ জুন ২০২৫

শত্রুতার বলি দুই পুকুরের মাছ, বিষাদের ঈদ কামালের পরিবারে

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

ঈদের আনন্দে যখন চারদিকে খুশির জোয়ার, তখন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার অলহরী খারহর গ্রামের মোর্শেদুর রহমান কামালের বাড়িতে নেমে এসেছে নিদারুণ বিষাদ। কে বা কারা ঈদের আগের রাতে তার দুই পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় আট হাজার পাঙ্গাস ও কয়েক হাজার দেশীয় প্রজাতির মাছ মেরে ফেলেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় দশ লাখ টাকা।

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে পোশাক কারখানায় কাজ করছেন কামাল হোসেন। নিজের রোজগারের কষ্টার্জিত প্রায় আট লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পুকুর দুটিতে মাছ চাষ করেছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল ঈদের পরে মাছ বিক্রি করে সংসারে খানিক স্বচ্ছলতা আনা। প্রতিটি মাছ তখন গড়ে এক কেজি ওজনে পৌঁছেছিল। সবকিছুই প্রস্তুত ছিল বিক্রির জন্য।

কিন্তু শুক্রবার (৬ জুন) দিনগত রাতে এক নির্মম শত্রুতার শিকার হয়ে এক নিমিষেই সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। পুকুরের পানিতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বিষ প্রয়োগ করে সমস্ত মাছ নিধন করে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে মৃত মাছের স্তূপ। ঈদের দিন ভোরে কামাল ও তার পরিবার সেই দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে করা হয়ে থাকতে পারে। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

কামালের বৃদ্ধ মা মুর্শিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আজ একটা ঈদের দিন, আমার ঘরে কেউ বাসি মুখেও ভাত খায়নি। ১৫ বছর ধইরা আমার পুত garments-এ কইরা, দিনে-রাতে খাট্টা অনেক কষ্টে এই ফিশারিডা করছিল। এহন আমার পুতে কী কইরা চলবো? আমাগোরে এইডার বিচার চাই।”

এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন জানিয়ে ভুক্তভোগী মোর্শেদুর রহমান বলেন, “আজকে ঈদের দিন। সবাই আনন্দ-ফুর্তি করতেছে, আর আমি আমার পরিবার ও প্রতিবেশী লোকজন নিয়া পুকুর থেইকা মরা মাছ তুলতেছি। আমার জানামতে তো আমার কোনো শত্রু নাই। তাইলে কেডা আমার এই ক্ষতিটা করলো? দুই পুকুরে প্রায় দশ লাখ টাকার মাছ ছিল। সব মইরা শেষ। ১৫ বছরের জমানো পুঁজি সব শেষ। যে আমার এই ক্ষতি করছে, আমি তার বিচার চাই, ক্ষতিপূরণ চাই।”

মোর্শেদুর রহমান কামালের স্ত্রী রিক্তা বেগম বলেন, “আমরা ভাবছিলাম এই ঈদে অনেক আনন্দ করব। একটু ভালো খাবো, বাচ্চারা নতুন জামা পইড়া ঈদগাহে যাবে। এখন মনে হচ্ছে ঈদই আর আসেনি আমাদের ঘরে।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য তফাজ্জল হোসেন বলেন, “পোশাক শ্রমিক কামাল দীর্ঘদিনের জমানো টাকায় মাছ চাষ শুরু করেছিল। সে খুব সহজ-সরল একটা ছেলে। প্রায় দশ লাখ টাকার মাছ মরাতে তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। যে এই ঘৃণ্য কাজ করেছে, তাকে খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি করছি।”

এদিকে, এ ঘৃণ্য কাজে যে বা যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এই জঘন্য ও হৃদয়বিদারক ঘটনার ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

এম.কে.

×