ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে নির্বাচন কেন তা বোধগম্য নয়, ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষই যেন ফুটে উঠেছে: বাম গণতান্ত্রিক জোট

প্রকাশিত: ২০:২৪, ৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:২৫, ৭ জুন ২০২৫

ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে নির্বাচন কেন তা বোধগম্য নয়, ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষই যেন ফুটে উঠেছে: বাম গণতান্ত্রিক জোট

ছবিঃ সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঈদের আগের দিন দেওয়া ভাষণে সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার কোন প্রতিফলন ঘটেনি বরং রাখাইনে করিডোর, চট্টগ্রামের নিউমুরিং কন্টিনেন্টাল টার্মিনালকে বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে ও ঐ বিষয়ে বিরোধীতাকারীদের নিয়ে যা বলা হয়েছে এবং যে সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগেরও বটে। 

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)'র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মোঃ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী আনিবার, প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ঈদের আগে শ্রমজীবী মানুষ শ্রমিক কর্মচারীরা অনেকে বেতন ভাতা পায়নি। ভাষণে বকেয়া বেতন-বোনাসের কোন কথা নেই। এমনকি গত রোজার ঈদের সময় সরকার ও মালিকপক্ষ যে ওয়াদা করেছিল তাও বাস্তবায়িত হয়নি। সরকারি তথ্যই বলছে এ সময় বেকারত্ব বেড়েছে, অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মব সন্ত্রাস চাঁদাবাজি দুর্নীতি চলছে, মানুষের জীবনে স্বস্তি নেই। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এসব কথার লেশমাত্র নেই। তিনি রাখাইনে করিডোর দেওয়ার প্রশ্নে যা বলতে চেয়েছেন তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় জনমত উপেক্ষা করে হলেও রাখাইনে করিডোর দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সবচেয়ে খুব উদ্বেগের বিষয় হলো, তিনি চট্টগ্রামের বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে যেসব কথার অবতারণা করেছেন তা কোন দেশ প্রেমিক মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। এমনকি তিনি এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা প্রকারান্তরে ‘মব সন্ত্রাস’ কেই উস্কে দিচ্ছে। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কোন পদে থেকে এ ধরনের উস্কানি জনগণ গ্রহণ করবে না। বরং প্রত্যাখ্যান করবে।

বিবৃতিতে বলা হয় চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক। এই বন্দর বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়া অর্থ দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার উপর আঘাত হানার পথ পরিষ্কার করা। ইতিমধ্যে দেশের বামপন্থী গণতান্ত্রিক দল ও দেশপ্রেমিকসমূহ সরকারের এই পদক্ষেপ রুখে দাঁড়াতে আগামী ২৭ ও ২৮শে জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড মার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কোন হুমকি ধামকি দিয়ে এই কর্মসূচি থেকে দেশ প্রেমিক জনগণকে পিছু হটানো যাবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং মানুষ এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এমনকি তারও আগে দ্রুততম সময়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চাইলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের এপ্রিল নির্বাচনের কথা বলেছেন। রোজা, পরীক্ষা, ধান কাটা, বর্ষা ইত্যাদি সার্বিক বিবেচনায় ঐ সময়ে নির্বাচন মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বলেছি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচিত সরকার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমরা মনে করি এ বছরের মধ্যেই এটি ভালোভাবে সম্ভব। এ সময় ২০২৪ এ জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞের বিচারের কাজ দৃশ্যমান করাও সম্ভব। কোন অজুহাতে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার অর্থ হলো কোন দল বা গোষ্ঠীর বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করা। দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাব বলয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। যা দেশকে দীর্ঘমেয়াদী সংকটে ফেলতে পারে। 

নেতৃবৃন্দ বলেন, ভাষণে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি, ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে কেন নির্বাচন তা বোধগম্য না। ভাষণে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ ফুটে উঠেছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ঈদের আগের দিন প্রধান উপদেষ্টার এ ধরনের ভাষণকে সাধারণ মানুষের প্রতি অবজ্ঞা ও ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিসেবে উল্লেখ করে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন ঘোষণা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও জনস্বার্থে বিরোধী যে কোন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকল বাম-প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তির প্রতি আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, অধিকাংশ দল ও জনগণের মতকে উপেক্ষা করে বিশেষ দল-গোষ্ঠীর স্বার্থে এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণার মধ্য দিয়ে ড. ইউনূস নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।

ইমরান

আরো পড়ুন  

×