
পাখির কথা ভাবলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ডানা মেলে আকাশে ওড়ার দৃশ্য। কিন্তু প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে, সব পাখিই আকাশে ওড়ার জন্য তৈরি হয়নি। আশ্চর্য হলেও সত্যি, পৃথিবীতে এমন অনেক পাখি আছে যারা কখনোই উড়তে পারেনি—কারণ তাদের দেহই তৈরি হয়েছে অন্যভাবে।
এই উড়তে অক্ষম পাখিরা বিভিন্ন অভিযোজনের মাধ্যমে নিজেদের টিকে থাকার অসাধারণ দক্ষতা গড়ে তুলেছে। কেউ অসাধারণভাবে দৌড়াতে পারে, কেউ দুর্দান্ত সাঁতার কাটে, আবার কেউ শক্তিশালী শরীর আর আচরণগত বৈশিষ্ট্য দিয়ে নিজেদের টিকে রাখে।
চলুন, জেনে নেওয়া যাক এমন সাতটি অদ্ভুত ও চমকপ্রদ পাখি সম্পর্কে যারা আকাশ নয়, মাটিকেই বেছে নিয়েছে তাদের জীবনযাত্রার জন্য:
১. উটপাখি (Ostrich)
বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি। ওজন ১০০ কেজির বেশি হওয়ায় উড়ে যাওয়া অসম্ভব। ছোট ডানাগুলো ওড়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে উটপাখি ৭০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে দৌড়াতে পারে—এটাই তার আত্মরক্ষার প্রধান উপায়।
২. এমু (Emu)
উটপাখির পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাখি। এটি অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। এর ছোট ডানাগুলো বিশাল শরীর তুলতে অক্ষম, তবে এর শক্তিশালী পা এবং ধারালো নখ আত্মরক্ষায় কার্যকর।
৩. পেঙ্গুইন (Penguin)
পেঙ্গুইনদের ডানা রূপান্তরিত হয়েছে শক্তিশালী পাখনায়, যেগুলো সাঁতারের জন্য আদর্শ। তারা পানির নিচে দ্রুতগতিতে চলাফেরা করে। এদের ঘন হাড় এবং ঝরঝরে দেহ পানির নিচে ডুবতে ও চলতে সাহায্য করে।
৪. ক্যাসোওয়ারি (Cassowary)
অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনির রেইনফরেস্টে পাওয়া যায়। এর মাথায় শক্ত হেলমেটের মতো অংশ (casque) থাকে। শক্তিশালী পা আর ধারালো নখ দিয়ে এটি নিজেকে রক্ষা করে। বনজ পরিবেশে চলাফেরার জন্য এদের উড়ার দরকার পড়ে না।
৫. কিউই (Kiwi)
নিউজিল্যান্ডের রাতচরা এই ছোট পাখিটির আছে লম্বা ঠোঁট ও প্রায় অদৃশ্য ডানা। এর হাড় আশ্চর্যজনকভাবে ভারী। শিকারির অভাবে এরা কখনোই উড়ার প্রয়োজন বোধ করেনি এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে গেছে।
৬. রিয়া (Rhea)
দক্ষিণ আমেরিকার তৃণভূমিতে পাওয়া যায়। লম্বা পা ও গলা, উঁচু দেহ নিয়ে এটি দ্রুতগতিতে দৌড়াতে পারে। ছোট ডানাগুলো ওড়ার জন্য নয়, বরং দৌড়াতে সাহায্য করে। এর অভিযোজন মূলত মাটির সঙ্গে মিল রেখে হয়েছে।
৭. কাকাপো (Kakapo)
নিউজিল্যান্ডের এই বিরল নিশাচর তোতাপাখি বেশ ভারী গঠনের। ছোট ডানাগুলো ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে, উড়তে নয়। শিকারির অনুপস্থিতিতে এই পাখির উড়ার প্রয়োজন পড়েনি, তাই ধীরে ধীরে উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
এরা প্রমাণ করে, সব পাখির গন্তব্য আকাশ নয়—কখনো কখনো মাটিই তাদের প্রকৃত আশ্রয়।
প্রকৃতির এই ব্যতিক্রমধর্মী সৃষ্টিগুলোর গল্প সত্যিই চমকপ্রদ!
Jahan