ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গ্রামের ঈদুল আযহা: শিকড়ের টানে উৎসবের উষ্ণতা

মো: নাঈমুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, নোবিপ্রবি।

প্রকাশিত: ১৯:০০, ৭ জুন ২০২৫

গ্রামের ঈদুল আযহা: শিকড়ের টানে উৎসবের উষ্ণতা

ঈদুল আযহা—একটি ত্যাগের উৎসব, একটি আত্মার অনুরণন। এটি কেবল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এ যেন হৃদয়ের গভীর কোনো টানে ভর করে এক অনন্য মিলনের মুহূর্ত। আর সেই অনুভূতির সবচেয়ে জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামবাংলার সরল, সজীব, ও মানবিক পরিবেশে।

ঈদের আগের দিনগুলোতেই গ্রামে যেন এক উৎসবের হাওয়া বয়ে যায়। হাটে হাটে কোরবানির পশুর হাঁকডাক, ছোটদের চোখে পশু দেখার আনন্দ, আর বাড়ির উঠোনে দড়ি বাঁধা গরুর পরিচর্যায় পরিবারের সকলের ব্যস্ততা—সব মিলিয়ে এক আবেগঘন প্রস্তুতির রূপ। শহরের মানুষেরাও ফিরে আসেন আপন ঠিকানায়। যে উঠোনে ছোটবেলায় দৌঁড়ে বেড়িয়েছেন, সেখানে আবার জমে ওঠে জীবনের আসল আনন্দ।

ঈদের সকালে ঈদগাহে জমায়েত হয় শত শত মানুষ। নামাজ শেষে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরার সেই মুহূর্তেই ফুটে ওঠে আন্তরিকতার নির্ভেজাল রূপ। কোরবানির কাজেও থাকে পরস্পরের সহায়তার দৃশ্য: কেউ গরু ধরছেন, কেউ পানি এনে দিচ্ছেন, কেউ মাংস কাটার কাজে ব্যস্ত। কোনো বাড়ি আলাদা নয়—সবাই সবার কাজে হাত বাড়ান। কোরবানির মাংস কেটে ভাগ করে দেওয়া হয় প্রতিবেশী, গরিব, আত্মীয়স্বজনের মাঝে। এখানে কোরবানি মানেই সাম্যের শিক্ষা।

মাটির চুলায় রান্না হচ্ছে কলিজা ভুনা, গরুর মাংসের ঝাল ঝোল আর সুগন্ধি খিচুড়ি। চারপাশে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া আর গন্ধে যেন এক মোহময় পরিবেশ তৈরি করে। পাড়াপড়শিরা একে অপরের বাড়িতে দাওয়াতে যান, ছোটরা হাতে হাতে মাংস নিয়ে পৌঁছে দেয় আত্মীয়স্বজনের ঘরে। এই আতিথেয়তা কেবল প্রথা নয়, এটি হৃদয়ের অনুশীলন।

প্রিয়জনেরা দূর শহর থেকে ফিরে আসে গ্রামের বাড়িতে। ভাই-বোন, খালা-খালু, চাচা-চাচী—সবাই এক ছাদের নিচে, এক উঠোনে। সকালের নাশতা থেকে শুরু করে সন্ধ্যার আড্ডা, শৈশবের গল্প, হাস্যরস, কৌতুক—এই মিলনে হারিয়ে যায় নাগরিক ব্যস্ততা। এই উৎসবে কেবল মাংস নয়, ভাগ হয়ে যায় আবেগ, স্মৃতি আর শিকড়ের ভালোবাসা।

গ্রামের ঈদ মানে প্রকৃতির কোলে নিঃশব্দ আনন্দ, পারিবারিক-সামাজিক বন্ধনের এক অনন্য রূপ, একে অপরকে ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টার সাফল্য। এখানে সময় যেন একটু ধীর, মানুষগুলো আন্তরিক, সম্পর্কগুলো অনবদ্য। ঈদুল আযহার আত্মত্যাগের শিক্ষা এখানে শুধু কোরবানির পশুতে সীমাবদ্ধ থাকেনা। গ্রামীণ সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন হিসেবে কাজ করে ঈদুল আযহারর উপলক্ষ।

গ্রামে ঈদুল আযহা উদযাপন উপলক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, আন্তরিকভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা, এবং শিকড়ের সঙ্গে নিজের বন্ধনকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মাঝেই আসল সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়।

রিফাত

×