ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পঙ্গুত্ব জয় করে জীবনযুদ্ধে জয়ী কাশেম, সঙ্গী শুধু একটি বিয়ারিং গাড়ি!

জাকির হোসেন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২০:০৯, ৭ জুন ২০২৫

পঙ্গুত্ব জয় করে জীবনযুদ্ধে জয়ী কাশেম, সঙ্গী শুধু একটি বিয়ারিং গাড়ি!

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার পৌর শহরের ভেলাতৈড় এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম। জন্মের কিছুদিন পরই আগুনে দগ্ধ হয়ে হারান একটি পা। পা হারানো ছেলেকে দীর্ঘদিন যত্নে বড় করে শেষে বিয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা। এরপর নিজের ও স্ত্রীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে জীবিকার সন্ধানে পথে নামেন কাশেম।

পঙ্গুত্ব নিয়েই জীবিকার তাগিদে ছুটে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। ২০১১ সাল থেকে তিনি জড়িয়ে পড়েন ইট ভাঙার কাজে। আর তার এই জীবনযুদ্ধের একমাত্র সঙ্গী একটি ছোট বিয়ারিং গাড়ি।

প্রতিদিন সকালে সেই বিয়ারিং গাড়িতে বসে দুই হাতের সাহায্যে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে কাজের খোঁজে ছুটে চলেন কাশেম। মাঝেমধ্যেই ইট ভাঙার কাজ পান তিনি। দিনে মজুরি পান ৪০০-৫০০ টাকা।

বর্তমানে কাশেমের পরিবারে রয়েছেন তার স্ত্রী ও তিন সন্তান, যাদের পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি তার সীমিত আয়ে।

কাশেমের পরিবারের সদস্যরা জানান, জন্মের কিছুদিন পরই আগুনে পুড়ে যায় কাশেমের ডান পা। এরপর অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাশেমকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই পঙ্গুত্বকে শক্তিতে পরিণত করে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আজেমা আক্তার বলেন, “কাশেমের এই জীবনযুদ্ধ সমাজের কাছে একটি বড় অনুপ্রেরণা। তাকে দেখে আমাদের সমাজের মানুষের শেখা উচিত। অন্যের কাছে না চেয়ে, ভিক্ষা না করে নিজে কর্ম করার মধ্যে শান্তি আছে।”

কাশেমের স্ত্রী বলেন, “সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা সংসার ভালোভাবে চালাতে পারতাম। বাচ্চাগুলোকে পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ করতে পারতাম।”

জীবন সংগ্রামে হার না মানা কাশেম বলেন, “আমি আগে বাসার আশপাশে মানুষের কাছে চেয়ে খেতাম। একদিন এক চাচা আমাকে বলল, ভিক্ষা করে আর কতদিন খাবি। বাচ্চা-কাচ্চাদের মানুষ করতে হবে না? নিজে ভালো কিছু কর। আমাকে আরও কিছু কটাক্ষ করে কথা বলেছিল সেদিন। ঠিক সেদিন থেকে আমি নিয়ত করলাম আর কখনো কারো কাছে চেয়ে খাব না। সেদিন থেকেই আমার এই সংগ্রামের জীবন শুরু। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে আমার কষ্টের অবসান ঘটত।”

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধী হয়েও কাশেম নিজে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছে, এটা প্রশংসার দাবি রাখে। তাকে দেখে আমাদের সমাজের মানুষের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করব তার পাশে থাকার।”

মিমিয়া

×