
ঈদ আসে খুশির বার্তা নিয়ে। পরিবার, প্রিয়জন আর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদের প্রভাত থেকে রাত পর্যন্ত কাটে আনন্দে, ভালোবাসায়, উৎসবে। নতুন পোশাক, মিষ্টি খাবার আর কোলাকুলির মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ হয় বহু প্রতীক্ষিত এই দিন। কিন্তু এই আনন্দযাত্রার বাইরে থেকেও একদল মানুষ আছেন, যাঁরা নিঃশব্দে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে। ঈদের দিনেও যাঁদের সময় কাটে কর্মব্যস্ততায়, সেবা প্রদানে। তাঁদের জন্য ঈদ মানে আর পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা কিছু নয়—তবুও সেটাই তাঁদের গর্ব, তাঁদের ঈদের আনন্দ।
ঈদের দিন সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশের নানা প্রান্তে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চালিয়ে যান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা, জনসমাগমে শৃঙ্খলা বজায় রাখা পর্যন্ত—সব দায়িত্বই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন তাঁরা।
চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ইনডোর সেবায়। রোগীর জন্য থেমে থাকে না সময়, থামে না চিকিৎসা। একদিকে উৎসব, অন্যদিকে জীবন রক্ষার দায়িত্ব—এই দ্বন্দ্বে দায়িত্বই বেছে নেন তাঁরা।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহের কর্মীরা মাঠে থাকেন প্রযুক্তিগত যে কোনো সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানে। ঈদের দিনেও যেন ঘরে আলো থাকে, রান্না বন্ধ না হয়, ট্যাপ শুকিয়ে না যায়—সেটিই নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক কাজ করেন তাঁরা।
ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের কর্মীরাও প্রস্তুত থাকেন যেকোনো দুর্ঘটনা বা জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিতে। পাশাপাশি পরিবহন খাতে কর্মরত চালক ও সহকারীরা ঈদের দিনেও সড়কে থাকেন—যাতে মানুষ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পৌঁছাতে পারে গন্তব্যে।
গণমাধ্যমকর্মীরাও ব্যস্ত থাকেন সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনায়। তাঁদের কারণে পাঠক ও দর্শক ঈদের দিনেও জানতে পারেন দেশের খবর, দেখতে পান সমাজের নানা চিত্র।
এসব মানুষ হয়তো সেই সকালে পরিবারের সঙ্গে বসেন না ঈদের সেমাই খেতে, হয়তো সন্তানের নতুন জামা পরার আনন্দ চোখের সামনে দেখতে পান না, তবু তাঁরা মনেপ্রাণে আনন্দ খুঁজে নেন নিজের কর্তব্য পালনে। আরেকজনের জীবন সহজ করে দেওয়াটাই হয়ে ওঠে তাঁদের ঈদ উদযাপন।
এই সব নিঃশব্দ যোদ্ধারাই আমাদের উৎসবকে করে তোলেন স্বাচ্ছন্দ্যময় ও নিরাপদ। তাঁদের নিষ্ঠা ও ত্যাগে সুগঠিত হয় মানবিক সমাজব্যবস্থা, যেখানে দায়িত্ব ও সহানুভূতির হাত ধরাধরি করে চলে।
এরা হয়তো খবরের শিরোনামে থাকেন না, থাকেন না ক্যামেরার ফ্ল্যাশে। কিন্তু এই অপরিহার্য মানুষেরাই বাস্তব জীবনের নায়ক, যাঁদের কারণে উৎসবের হাসি পৌঁছে যায় সর্বত্র।
তাঁদের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা—কারণ ঈদের দিনেও যাঁরা দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাঁরা সত্যিকার অর্থেই সেবার পরমপ্রাপ্তিতে পৌঁছান।
রাজু