
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক তখন সকাল ৭টা। গাইবান্ধা সদর উপজেলার ফুলবাড়ি চার রাস্তার মোড়ে ঈদগাহ মাঠের সামনে মাটির তৈরি মৃৎশিল্পের দোকান নিয়ে বসে আছেন মোহাম্মদ আনসার আলী। বয়স ৪৫ ছাড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেল, গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নতুন পোশাক পরিধান করে ভিড় জমিয়েছে ঈদগাহ মাঠের সামনে। কিনছে আনসার আলীর মাটির তৈরি হাড়ি, পাতিল, কলস, হাতি, ঘোড়া, টাকা রাখার ব্যাংকসহ আরও অনেক ধরনের মাটির মৃৎশিল্প।
আনসার আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “ঈদ বলতে আমাদের কিছু নেই। ঈদের আনন্দ কী, আমরা সেটা জানি না। এই ব্যবসায় নিয়োজিত আছি গত এক যুগ থেকে। এই ব্যবসায় এখন লাভ কম, কিন্তু তবুও করতে হয়। পরিবারের ও সন্তানের কথা চিন্তা করে রাস্তার ধারে রোদে বসেই ব্যবসা করি। হাত পেতে চেয়ে খাওয়ার পাই না। বড় ব্যবসা করবো, সে টাকাও নাই। তাই এগুলা বেচিয়া সংসার চালাই।”
জানা যায়, প্রতি পিস পাতিল, চুলা, প্লেট, বাটনা, গ্লাস বিক্রি করছেন ১০ টাকা, মাটির তৈরি টাকা রাখার ব্যাংক ২০ টাকা থেকে শুরু করে আছে ৫০ টাকা পর্যন্ত। বড় হাতি, ঘোড়ার দাম ৩০ টাকা।
আনসার আলীর দোকানে কিনতে আসা চুনিয়াকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ বেলাল মিয়া বলেন, “নাতি-নাতনির জন্য মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, হাড়ি, পাতিল, চুলা কিনলাম। কালের বিবর্তনে এসব হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই নিলাম নাতি-নাতনির জন্য।”
এমন হাজারো আনসার আলী আছেন, যারা পথে পথে ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়ে এসব মৃৎশিল্প বিক্রি করেন।
তাদের ঈদ কেমন যায় বা কেমন হয়, তা হয়তো কেউ জানেনই না। আজ সারাদিন যদি এসব বিক্রি করা হয়, তাহলে মুরগি কিনে বাড়ি ফিরবেন আনসার আলী। তারপর পরিবারের সঙ্গে করবেন ঈদ উদযাপন।
সানজানা