
ছবিঃ সংগৃহীত
আপনার শরীরের সবচেয়ে নিঃশব্দ অথচ সবচেয়ে পরিশ্রমী অঙ্গটি কী জানেন? হ্যাঁ, সেটি হলো যকৃত (লিভার)। প্রতিনিয়ত শরীরের বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে, হজমে সহায়তা করে ও শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই অঙ্গটি। অথচ আমরা প্রায়ই যকৃতের যত্ন নিতে ভুলে যাই। অবহেলিত এই অঙ্গের সুস্থতা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন কিছু নির্দিষ্ট খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখার।
বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ যকৃতজনিত সমস্যায় ভুগছে—ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস, সিরোসিস কিংবা এমনকি যকৃত ক্যান্সার। তবে আশার কথা হলো, সঠিক খাবারের মাধ্যমে আপনি সহজেই যকৃতকে সুরক্ষা দিতে পারেন। হ্যানয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ান ডাঃ ট্রান থি চা ফুং সম্প্রতি এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন।
১. গ্রীন টি – প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্টের আধার
গ্রীন টি কেবল ওজন কমানোর জন্যই নয়, বরং যকৃতের সুরক্ষাতেও অসাধারণ কার্যকর। এতে থাকা ক্যাটেচিনস (Catechins) নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যকৃতের কোষকে ফ্রি র্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এই উপাদান হরমোন ব্যালেন্সে সাহায্য করে এবং দীর্ঘমেয়াদে যকৃতের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
২. ক্রুসিফেরাস সবজি – যকৃত পরিষ্কারের প্রাকৃতিক সহায়ক
ব্রকলি, ফুলকপি, ক্যাল, ব্রাসেলস স্প্রাউটের মতো সবজিকে বলা হয় ‘ডিটক্সিং চ্যাম্পিয়ন’। এদের মধ্যে থাকা গ্লুটাথায়োন ও গ্লুকোসিনোলেট যৌগ শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, নিয়মিত এই সবজি খেলে যকৃতের এনজাইমগুলো আরও সক্রিয় হয়, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. হলুদ – সোনালি মশলা, সোনার মতো গুণ
হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন নামক যৌগটি যকৃতের পিত্ত উৎপাদন বাড়ায়, যা হজমশক্তি উন্নত করে এবং ভারী ধাতু শরীর থেকে দূর করতে সাহায্য করে। এই উপাদানটি যকৃতের কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে, যা দীর্ঘমেয়াদে যকৃতের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
৪. সাইট্রাস ফল – টক্সিন দূর করতে ভিটামিন সি
লেবু, কমলা, গ্রেপফ্রুট ইত্যাদি সাইট্রাস ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে, যা যকৃতকে সক্রিয় করে তোলে। গ্রেপফ্রুটে থাকা ন্যারিনজিন ও ন্যারিনজিনিন প্রদাহ কমায় এবং কোষগুলোকে রক্ষা করে। এই ফলগুলো শরীরের টক্সিনকে জল-দ্রবণীয় করে শরীর থেকে সহজে বের করে দেয়।
৫. রসুন – ছোট একটি উপাদানে বিশাল উপকার
প্রতিদিনকার রান্নায় ব্যবহৃত সাধারণ রসুনও যকৃতের বন্ধু। এতে থাকা সালফার যৌগ যকৃতের ডিটক্স এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে। পাশাপাশি এতে ভিটামিন বি৬, সি, সেলেনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে, যা যকৃতের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে।
যকৃত সুস্থ রাখতে বাড়তি কিছু পরামর্শ
ডাঃ ফুং আরও বলেন, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়াম যকৃতের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। যাদের পরিবারে যকৃতের রোগের ইতিহাস রয়েছে বা যাদের দীর্ঘদিন ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয়, তাদের বছরে একবার ‘লিভার ফাংশন টেস্ট’ করিয়ে নেওয়া উচিত।
যকৃতকে ভালো রাখতে আধুনিক ওষুধ নয়, বরং আপনার রান্নাঘরেই লুকিয়ে রয়েছে সেরা প্রতিষেধক। গ্রীন টি থেকে শুরু করে রসুন—এই সাধারণ খাবারগুলো আপনার যকৃতকে সুস্থ, সচল ও সক্রিয় রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে। আজ থেকেই আপনার প্লেটে রাখুন এই উপকারী খাবারগুলো, কারণ সুস্থ যকৃত মানেই সুস্থ জীবন।
সূত্র ঃhttps://shorturl.at/Vpcqs
পৃথী