
দৈনিক জনকণ্ঠ
পাথরে পাথরে গড়িয়ে পড়ছে শতধারায় জল। আকাশ ছুঁই ছুঁই টিলা থেকে ঝরে পড়া সাদা ফেনায়িত ধারা যেন প্রকৃতির কণ্ঠে এক অনন্ত সুর।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বুকে এমন এক অপরূপ জলছবি আঁকিয়ে রেখেছে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই জলপ্রপাত এখন যেন ভ্রমণপিপাসু মানুষের মিলনমেলা।
ঈদের ছুটিতে একটু স্বস্তি, একটু প্রশান্তির খোঁজে ছুটে এসেছে শত শত মানুষ। কারও সঙ্গে প্রিয়জন, কারও সঙ্গে বন্ধুরা, আবার কেউ একা তবুও সবার চোখে এক অভিন্ন বিস্ময়।
২০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসা এই প্রপাত যেন শুধু চোখে দেখা নয়, আত্মায় ধারণ করার মতো এক সৌন্দর্য।চারপাশজুড়ে নিবিড় সবুজের সমারোহ। পাহাড়ি গুহা, টিলা, বুনো পাখির ডাক, আর ঝরনার কণ্ঠ রব মিলে এক স্বপ্নিল পরিবেশ।
প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্যের মাঝে পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যে গড়ে উঠেছে আধুনিক ভ্রমণসুবিধা জেলা পরিষদের উদ্যোগে রয়েছে রেস্ট হাউস, পিকনিক কর্নার, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা ও ভিজিটর সেন্টার।
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা রিংকু দে, লিপি দে ও নীলাম্বরি মজুমদার চোখে বিস্ময় আর মুখে মুগ্ধতার হাসি নিয়ে বলেন, “মনে হচ্ছিল যেন বিদেশের কোনো প্রাকৃতিক স্পটে আছি। প্রকৃতির এতটা নিবিড় রূপ আগে কখনও দেখিনি।”
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে আসা পর্যটক নির্মল দেব ও প্রার্থনা দম্পতি জানান, “মাধবকুন্ড বারবার টানে। এখানে এলেই মনটা হালকা হয়ে যায়, মনে হয় প্রকৃতির বুকে ফিরে পেয়েছি নিজেকে।”
মাধবকুন্ড জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই সুমন সিংহ বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৭০০ জন পর্যটক আসছেন। ঈদের ছুটিতে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও আমরা সজাগ রয়েছি।”
তিনি আরও জানান, পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে যেন কেউ অপরিচিত গাইডের খপ্পরে না পড়েন বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় না যান। ট্যুরিস্ট পুলিশের ২৪ ঘণ্টার হেল্পডেস্ক সবসময় সহায়তায় প্রস্তুত।
মাধবকুন্ড কেবল একটি জলপ্রপাত নয়, এটি প্রকৃতির বুকে লেখা এক কবিতা—যেখানে জল গড়ায় সুর হয়ে, বাতাস বয় ভালোবাসার মতো। ঈদের ছুটিতে কিংবা যেকোনো ক্লান্ত দুপুরে যদি শান্তির পরশ খুঁজে বেড়ান, তবে মাধবকুন্ড হতে পারে আপনার আত্মার আশ্রয়।
হ্যাপী