ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নদী নয়, যেন কক্সবাজার আলেকজান্ডার মেঘনা পাড়ে ঈদের উৎসব

এইচ.এম আল-আমিন,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,লক্ষ্মীপুর 

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ৮ জুন ২০২৫

নদী নয়, যেন কক্সবাজার আলেকজান্ডার মেঘনা পাড়ে ঈদের উৎসব

দৈনিক জনকণ্ঠ

লক্ষ্মীপুরের একেবারে উপকূলীয় অঞ্চল রামগতি উপজেলা। মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষেই এর অবস্থান। অব্যাহত ভাঙনে পৌর শহর আলেকজান্ডারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী।

উপজেলা পরিষদের বারান্দা থেকে মাত্র ১০০ গজের দূরত্বে মেঘনা পাড়। ভাঙন রোধে এ পাড়ে হয়েছে বাঁধ। সেই বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে যত দূর চোখ যাই শুধু পানি আর পানি। জোয়ার-ভাটার উঁচু নীচু ঢেউ আঁচড়ে পড়ে কিনারে। বাঁধের ওপর সব-সময় যেন পিনপতন হাওয়া লেগেই থাকে, সবাই দাঁড়িয়ে সেই হাওয়া উপভোগ করেন।

বিকাল গালেই নদীর ওপারে পশ্চিমের সূর্যাস্তসহ এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়, এমন মনোরম পরিবেশ কার না ভালো লাগে। তাই তো প্রতিনিয়ত একটু শান্তির খোঁজে অসংখ্য মানুষের ঢল নামে। এখানকার নতুন বালুর বেলাভূমি, নদীর ঢেউ, জলের মিষ্টি সুর- এসবে মুগ্ধ হন আগতরা। এখানে এলে বাতাসের দোলে শরীর ওমন ভালো হয়ে যাবে। তাই তো সবাই বারবার ছুটে আসেন এই মেঘনার পারে।

এই জনপদে বিনোদনের আর তেমন কোনও মাধ্যম নেই বললেই চলে। তাই তো দলবেঁধে পরিবারের সবাই মিলে ভিড় জমানো মেঘনা নদীর পাড়ে।
 

ঈদকে ঘিরে এখানে প্রাণের উচ্ছ্বাস বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে বিনোদনপ্রেমীরা। নদী পাড়ে এসে নৌকায় চড়ে ঘুরছেন মেঘনায়। পরিবারে সদস্যদের সঙ্গে আসা ছোট্ট শিশুরাও উল্লাসে মাতে এখানে এসে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।


বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ঢল নামা মেঘনা নদীর পাড় যেন এই অঞ্চলের মানুষের কাছে আরেক  কক্সবাজার। 

নোয়াখালী থেকে ইদ উপলক্ষ্যে মেঘনা নদীর পাড়ে ঘুরতে এসেছেন তিন বন্ধু সায়েম মোহাম্মদ সানি,হাফেজ মো: ওমর ফারুক, মো:জিহাদুল ইসলাম তারা জানান, শহরের বন্দিজীবন থেকে নদীর পাড়ে এসে অনেক স্বস্তি লাগছে। তাদের মতে, আলেকজান্ডার মেঘনা পাড়ের প্রকৃতি সত্যিই ভালো লাগার।

তাহমিনা নাসরিন নিলা জনকণ্ঠকে বলেন, মেঘনা পাড়ে এসে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার স্বাদ মিটেছে। এখানে জেলেরা রুপালি ইলিশ পাবে, তার সৌন্দর্য নিজ চোখে উপভোগ করা যাবে। জীবিত ইলিশ মাছ দেখতে পাওয়া যাবে, যা সচরাচর দেখা যাবে না। ট্রলারে করে দূরে জেগে ওঠা নতুন চরে ঘোরা যাবে, পরিবারসহ এসে বেশ ভালোই লাগছে।

ইদ উপলক্ষ্যে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেলে-বুড়ো সবাই আলেকজান্ডার মেঘনা পাড়ে ঘুরতে আসছেন। ছেলে ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে নদীর পাড়ে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব মো:জমির হাওলাদার তিনি বলেন, এই উপজেলা বিনোদনের জন্য আর তেমন কোনও জায়গা নেই। ঈদে যে নাতি-নাতনিদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবো সেই সুযোগটুকুও নেই,

তবে মেঘনা পাড় আমাদের বিনোদনের খোরাক মেটা। এখানে কিছু সংস্কার কাজ করার প্রয়োজন। দূর থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা দরকার। এদিকে কর্তৃপক্ষের ভালোভাবে নজর দেওয়া উচিত।

বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা মেঘনা পাড় সম্পর্কে মো: সাফায়েত উল্লাহ নামের এক প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক বলেন, মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে আলেকজান্ডার শহর যখন মারাত্মক হুমকির মুখে, ঠিক তখন সেনাবাহিনী নদীর পাড় রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করে।

এ বাঁধের ফলে পলি জমে নদীর পাড়ে বেলাভূমি তৈরি হয়ে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর যত্ন নেওয়া প্রযোজনা। মেঘনার ভাঙন এখনও থামেনি। পরে থাকা মেঘনার বাঁধ নির্মাণের বাকি কাজটুকু শেষ করার জোর দাবি জানান এই শিক্ষক।


মেঘনা পাটের সবচেয়ে ভীতিকর বিষয় হচ্ছে নদীতে কোনও ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই ট্রলার এবং স্পিডবোটে দেদার ঘোরাফেরা করছেন পর্যটকরা। এতে কিছুটা ভীতির সঞ্চার হচ্ছে।

নোয়াখালী থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মো:জামাল বলেন, নিজ জেলার আশপাশে মোটামুটি সব জায়গায় পরিবার নিয়ে ঘোরা হয়েছে। ঈদে মনে হলো মেঘনা পারে আসাটাই উত্তম। সবাই মিলে ট্রলারে করে নদীতে ঘুরলাম। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় ট্রলারে কোনও ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল না। তাছাড়া যাত্রীও অনেক বেশি ছিল। এ জন্য কিছুটা ভয় পেরেছিলাম।

নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই ট্রলার চালানোর বিষয়ে মাঝি মতিন মিমা বলেন, এই নদীতে আমার ২২ বছর ধারে ট্রলার চালানোর অভিজ্ঞতা। কখনও কোনও ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে দেখিনি। আমরা জোয়ার ভাটা বুঝে ট্রলার চালাই। জোয়ারের সময় কোনও পর্যটক বা যাত্রী ট্রলারে উঠাই না।

মেঘনা পাড়ের সার্বিক বিষয়ে রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, এই উপজেলার অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে মেঘনা পাড়। ইদ উপলক্ষ্যে এখানে আগের তুলনা ভিড় অনেক বেড়েছে।

তাই কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি  নিরাপত্তাকর্মীরা নিয়োজিত আছেন। এছাড়া ট্রলার এবং স্পিডবোটে পর্যটকদের ঘোরানোর সময় নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

হ্যাপী

×