ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হারিয়ে যাচ্ছে গরুর মাংসের শুটকির ঐতিহ্য : সংরক্ষণে চাই সচেতনতা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ৯ জুন ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে গরুর মাংসের শুটকির ঐতিহ্য : সংরক্ষণে চাই সচেতনতা

ছবি: সংগৃহীত

একসময় গ্রামবাংলার হাটে-বাজারে গরুর মাংসের শুঁটকি ছিল এক পরিচিত দৃশ্য। উৎসব-পার্বণ কিংবা ঘরের খাদ্য সংরক্ষণের কৌশল হিসেবে গরুর শুঁটকি ছিল সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা। কিন্তু আধুনিক ফ্রিজিং সিস্টেমের প্রসার, নগরায়ণ ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের ফলে গরুর শুটকির প্রচলন দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে।

কীভাবে শুরু হয়েছিল গরুর শুটকির প্রচলন?

বাংলাদেশে পশুর মাংস সংরক্ষণের প্রাচীন পদ্ধতি হিসেবে শুঁটকি তৈরি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। বিদ্যুৎবিহীন গ্রামাঞ্চলে কোরবানির মাংস সংরক্ষণের বিকল্প ছিল না। তাই অতিরিক্ত মাংস রোদে শুকিয়ে দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হতো। অঞ্চলভেদে কেউ নুন-হলুদ মাখিয়ে, কেউ লবণ-মরিচে মেখে কাঁচা রোদে শুকাতো, যেটি স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পায় "গরুর শুঁটকি" নামে।

কোন অঞ্চলে বেশি প্রচলন?

গরুর শুটকির বেশি প্রচলন দেখা যায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল (দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও), দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল (খুলনা, সাতক্ষীরা), এবং সিলেট অঞ্চলে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের পরে গ্রামে গ্রামে এ শুঁটকি তৈরির দৃশ্য চোখে পড়ে।

গরুর শুঁটকি তৈরির সহজ উপায়

১. গরুর মাংস ধুয়ে ছোট ছোট পাতলা টুকরো করে কেটে নিতে হবে।
২. অতিরিক্ত চর্বি ও রক্ত অপসারণ করে নিতে হবে।
৩. টুকরোগুলোতে লবণ, হলুদ, শুকনো মরিচ গুঁড়া বা সামান্য ভিনেগার মাখিয়ে নিতে পারেন।
৪. খোলা জায়গায় পরিষ্কার ছায়াযুক্ত স্থানে জাল বা দড়িতে ঝুলিয়ে রোদে শুকাতে হবে।
৫. তিন থেকে পাঁচ দিন রোদে শুকালে মাংস শক্ত ও গন্ধহীন হয়ে যায়।
৬. শুটকিগুলো ঠান্ডা হলে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

 

গরুর শুটকির উপকারিতা

দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণযোগ্য: বিদ্যুৎ বা রেফ্রিজারেশন ছাড়াও দীর্ঘদিন ভালো থাকে।

স্বাদে বৈচিত্র্য: সাধারণ মাংসের চেয়ে ভিন্ন স্বাদের একটি খাবার।

খরচ সাশ্রয়ী: একবার তৈরি করে মাসব্যাপী সংরক্ষণ করা যায়।

প্রোটিন সমৃদ্ধ: সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে প্রোটিন ঘাটতি পূরণে সহায়ক।


গরুর শুঁটকি রান্নার জনপ্রিয় পদ্ধতি

১. শুটকির টুকরোগুলো হালকা পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২. পেঁয়াজ, রসুন, আদা, শুকনো মরিচ, কাঁচামরিচ দিয়ে মসলা তৈরি করুন।
3. হালকা তেলে মসলা কষিয়ে শুঁটকি দিয়ে দিন।
৪. চাইলে আলু বা বেগুন দিয়ে রান্না করা যায়।
৫. ঢেকে দিয়ে হালকা পানিতে মাঝারি আঁচে রান্না করুন ১৫-২০ মিনিট।
৬. ভুনা ভুনা হলে ধনেপাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

আধুনিককরণ বনাম ঐতিহ্য

বর্তমানে রেফ্রিজারেটরের ব্যাপক ব্যবহার ও শহুরে জীবনে সময়ের অভাব গরুর শুটকির ব্যবহারকে হ্রাস করেছে। তবুও কিছু পরিবার, বিশেষ করে যারা শেকড়ের টানে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখেন, তারা এখনও শুঁটকি তৈরি করেন।

গরুর শুঁটকি শুধু একটি খাবার নয়, এটি গ্রামীণ জীবনের স্মৃতি, বেঁচে থাকার সংগ্রাম এবং খাদ্য সংরক্ষণের একটি ঐতিহ্যবাহী কৌশল। এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত, তা সংরক্ষণ ও প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। সঠিকভাবে তৈরি ও বাজারজাত করলে এটি হতে পারে একটি লাভজনক ঘরোয়া পণ্যও।

Mily

×