
ছবি: সংগৃহীত
কায়লা হ্যারিসনের গলায় থাকুক বা কোমরে—সোনার পদক জয়ের অভ্যাস তাঁর অনেকদিনের। অলিম্পিকে তিনি জিতেছেন সোনা, পেশাদার মিক্সড মার্শাল আর্টস (এমএমএ)-এ হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন, এখন আবার ইউএফসি (UFC)-এর নতুন তারকা। আর সামনে তাঁর অপেক্ষায় আরেক বড় লড়াই—অ্যামান্ডা নুনেসের সঙ্গে!
গত শনিবার ইউএফসি ৩১৬-এ কায়লা ১৩৫ পাউন্ড বিভাগে সাবেক চ্যাম্পিয়ন জুলিয়ানা পেনিয়াকে হারিয়ে নতুন চ্যাম্পিয়ন হন। ম্যাচে ছিলেন মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কিংবদন্তি বক্সার মাইক টাইসন। ম্যাচ শেষে কায়লা রিং থেকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন অ্যামান্ডা নুনেসকে, যিনি কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছিলেন।
নুনেস রিংয়ে উঠে এসে কায়লার সঙ্গে হাত মেলান, কথা বলেন এবং ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন মুখোমুখি। ইউএফসি প্রেসিডেন্ট ডানা হোয়াইট বলেন, “মুহূর্তটা বড় মনে হচ্ছিল।”
অলিম্পিক স্বর্ণজয় থেকে ইউএফসি চ্যাম্পিয়ন
২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে কায়লা হ্যারিসন প্রথম মার্কিন নারী হিসেবে জুডোতে সোনা জেতেন। পরে ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকেও সোনা জেতেন। এরপর তিনি ২০১৮ সালে এমএমএ-তে নাম লেখান। পেশাদার ফাইটার্স লিগ (PFL)-এ দু’বার চ্যাম্পিয়ন হন এবং প্রতি বার ১০ লাখ ডলার পুরস্কার পান। ইউএফসি-তে তিনি মাত্র তিনটি ম্যাচেই জিতে গেলেন চ্যাম্পিয়নশিপ বেল্ট।
তাঁর মোট রেকর্ড: ১৯টি জয়, ১টি হার।
ছোটবেলার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা
কায়লা শুধু একজন অ্যাথলেটই নন, তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন শৈশবে। তাঁর জুডো কোচই তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছিলেন। এ কারণে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, এমনকি আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে আবার ঘুরে দাঁড়ান। এখন তিনি খোলাখুলি এসব বিষয়ে কথা বলেন, যেন অন্য কেউ এই কষ্টে না পড়ে।
কায়লা বলেন, “আমি আর সেই ছোট মেয়ে নই। আমি বড় হয়েছি। আমি চাই অন্যরাও সাহস পাক। আমি চাই এই বিষয়ে আমরা কথা বলি।”
একসঙ্গে যোদ্ধা ও মা
২০১৯ সালে কায়লার মা অসুস্থ হন, সৎবাবা মারা যান। তখন তিনি তাঁর ভাগ্নে ও ভাগ্নিকে নিজের জিম্মায় নেন, পরে দত্তকও নেন। এখন তিনি একা হাতে চার সন্তানের দায়িত্ব পালন করছেন—দুইটি নিজের এবং দুইটি দত্তক নেয়া।
তিনি মজা করে বলেন, “আমি একজন মা। তাই কার্ডে আমাকে যত আগে রাখা যায়, ততই ভালো!”
সামনে নুনেস বনাম কায়লা?
অ্যামান্ডা নুনেস ২০২৩ সালে অবসর নেন, তাই আবার লড়াই করতে হলে তাঁকে অন্তত ছয় মাস আগে থেকে ড্রাগ টেস্টে অংশ নিতে হবে। তবে দুজনের কথাবার্তা দেখে বোঝা যাচ্ছে, এই লড়াই ভবিষ্যতে হবেই। নুনেসও বলেন, “আমরা আবার একসঙ্গে রিংয়ে দেখা করব।”
কায়লা বলেন, “এই বেল্টটা দারুণ। কিন্তু এখানে পৌঁছানোর পথটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি গর্বিত যে আমি এই মানুষটিতে পরিণত হয়েছি।”
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: কায়লা হ্যারিসন
বয়স: ৩৪ বছর
অর্জন: ২টি অলিম্পিক সোনা, ২টি PFL শিরোপা, ১টি ইউএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ
ফাইট রেকর্ড: ১৯ জয়, ১ হার
পারিবারিক অবস্থা: একক মা, ৪ সন্তানের অভিভাবক
আগামী দিনে কায়লা বনাম নুনেস—দেখার অপেক্ষায় পুরো ক্রীড়াজগৎ।
আর কায়লার গল্প আমাদের শেখায়—আলোয় পৌঁছাতে হলে কতটা অন্ধকার পথ পেরিয়ে আসতে হয়।
সূত্র: এপি।
রাকিব