ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আলয়ই আমার আরাধনা: নারীর চোখে ঘর

মো. আতিকুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ৯ জুন ২০২৫

আলয়ই আমার আরাধনা: নারীর চোখে ঘর

ঘর—এই একটি শব্দেই জড়িয়ে থাকে কত শত মানে, অনুভব আর স্মৃতি! নারীর চোখে ঘর কখনও হয় আশ্রয়ের ঠিকানা, কখনও শান্তির গন্তব্য, আবার কখনও বা নিজের ছোট্ট পৃথিবী।

সমাজে প্রচলিত একটি কথা আছে—“নারীর জায়গা ঘরে।” এই কথার পেছনে পুরনো একরকম গোঁড়ামি থাকলেও, বর্তমান সময়ের নারী সেই ‘ঘর’ শব্দটিকে নিজের মতো করে সংজ্ঞায়িত করছেন। তিনি এখন আর শুধুই গৃহিণী নন; তিনি ঘরের সৌন্দর্য, শৃঙ্খলা, আবেগ আর প্রাণশক্তির প্রতীক। একজন নারী যখন ঘর সাজান, তখন তিনি কেবল আসবাবের জায়গা বদলান না—তিনি নিজের মনের রঙে ঘর রাঙান। পর্দার রঙ, বিছানার চাদর, টেবিলের ফুলদানি কিংবা জানালার পাশে রাখা একটা বই—সবকিছুতেই থাকে তাঁর স্পর্শ, তাঁর রুচি, আর তাঁর ভালোবাসা।

অনেকেই বলেন, ঘর হলো পুরুষের উপার্জনে নির্মিত একক পরিসর। কিন্তু একজন নারীর ছোঁয়া ছাড়া সেই ঘর কখনও ‘বাড়ি’ হয়ে উঠতে পারে না। রান্নাঘরের ভাপা ভাতের গন্ধ, সন্তানের বই গোছানোর অভ্যাস, স্বামীর অফিস ব্যাগে রাখা পানির বোতল—সবটাই যেন এক নিঃশব্দ যত্নের কাব্য। নারী সংসার চালান ভালোবাসা দিয়ে, গুছিয়ে রাখেন যত্নে, আর রক্ষা করেন ধৈর্যে। অথচ, তাঁর এই অবদান অনেক সময় চোখে পড়ে না, স্বীকৃতি মেলে না। তবু তিনি জানেন, এই ঘরকে প্রাণবন্ত করে রাখার মূল কৃতিত্ব তাঁরই।

আধুনিক নারীরা বাইরে কাজ করলেও, তাঁদের ঘরের প্রতি ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমে না। অফিস ফেরত ক্লান্ত শরীরে যখন তিনি পর্দা বদলান, ঘরের বাতাসে সুগন্ধ ছড়ান, তখন সেটি কোনো দায়িত্ব নয়—বরং তাঁর একান্ত আরাধনা। তিনি জানেন, একটি পরিপাটি ঘর মানসিক প্রশান্তির আধার। নিজের মতো সাজানো এক টুকরো কোণে বসে চা খাওয়ার যে তৃপ্তি, তা শহরের ব্যস্ততম রেস্তোরাঁয়ও মেলে না। তিনি ঘরকে দেখেন আত্মপরিচয়ের মতো, নিজের ছায়ার মতো।

‘আলয়’ শব্দটির মানে কেবল আলো নয়, বরং জীবনের উষ্ণতা, নির্ভরতা আর ভালোবাসার প্রতীক। নারীর চোখে ঘর মানেই এই ‘আলয়’—যা তিনি প্রতিদিন সযত্নে জ্বেলে রাখেন। এই আলো শুধু বৈদ্যুতিক বাতির আলো নয়—এ আলো তাঁর হাসিতে, চোখে, কণ্ঠে। এই আলোয় ঘর জেগে থাকে, সংসার বাঁচে, জীবন এগিয়ে চলে। তাই যখন একজন নারী বলেন, “এই ঘরই আমার আরাধনা,” তখন তা নিছক এক কথা নয়, বরং এক গভীর আত্মপ্রত্যয়ের ঘোষণা। তিনি জানেন, এই ঘর তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি, সবচেয়ে নির্ভরতার জায়গা।

আজ, এমন প্রতিটি নারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই—যাঁরা তাঁদের ঘরকে শুধু থাকার জায়গা নয়, বরং ভালোবাসার স্বর্গ করে তুলেছেন। তাঁরা ঘরের মধ্যে থেকেও বাইরের দিগন্তে চোখ রাখেন, আবার বাইরের ব্যস্ততার মধ্যেও ঘরের আলো নিভতে দেন না। এই দ্বৈত ভারসাম্যই তাঁদের করে তোলে অনন্য—শ্রদ্ধার, ভালোবাসার এবং অনুপ্রেরণার প্রতীক।

Jahan

×