
ছবিঃ সংগৃহীত
আমরা অনেকেই ফ্রিজকে একটি "যা খুশি রাখার ঠাণ্ডা বাক্স" হিসেবে ব্যবহার করি। বাজার করে ফেরার পর দুধ, ডিম, চিজ, ফলমূল, বাকি খাবার — যা যেভাবে জায়গা পায়, সেভাবেই গুঁজে রাখি। কেউ কেউ আবার দুধ কিংবা ডিম ফ্রিজের দরজার খোপেই রেখে দেন, যেটা আসলে হতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।
খাদ্যবিজ্ঞানী এবং “150 Food Science Questions Answered” বইয়ের লেখক ব্রায়ান কুয়ক লে জানান,
“ফ্রিজের দরজার অংশটি হলো পুরো ফ্রিজের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ অংশ, কারণ এটি ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত করার ফ্যান থেকে সবচেয়ে দূরে। দরজা খোলা হলে গরম বাতাস দ্রুত ঢুকে পড়ে, ফলে এই অংশে বারবার তাপমাত্রা ওঠানামা করে।”
এর মানে হলো, ফ্রিজের দরজার অংশ শুধু সুবিধাজনক নয়, বরং তা তাপমাত্রার সবচেয়ে অনির্ভরযোগ্য এলাকা, যেখানে রাখলে দুধ, ডিম, চিজ ইত্যাদির মত তাপ-সংবেদনশীল খাবার দ্রুত নষ্ট হতে পারে — এমনকি খাদ্যবাহিত রোগও হতে পারে।
কেন ফ্রিজের দরজা সবচেয়ে উষ্ণ?
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফুড পলিসি অধ্যাপক ডারিন ডেটউইলার বলেন,
“প্রতিবার ফ্রিজ খোলা হলে ঠাণ্ডা বাতাস বের হয়ে যায় এবং গরম বাতাস ঢুকে পড়ে, ফলে ফ্রিজের দরজার অংশে তাপমাত্রা দ্রুত ওঠানামা করে। এটি মূল শেলফের তুলনায় কয়েক ডিগ্রি বেশি হতে পারে এবং অনেক সময় ৪০°F (৪°C) এর ওপরে চলে যেতে পারে, যা ‘ডেঞ্জার জোন’-এর মধ্যে পড়ে।”
এই “ডেঞ্জার জোন” (৪০°F থেকে ১৪০°F পর্যন্ত) হলো সেই তাপমাত্রার সীমা যেখানে ব্যাকটেরিয়া সবচেয়ে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। গরম আবহাওয়ায় বা ফ্রিজ ঘন ঘন খোলা হলে দরজার তাপমাত্রা আরও ৫ থেকে ১০ ডিগ্রি বেড়ে যেতে পারে, যা খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ায়।
যেসব খাবার ফ্রিজের দরজায় রাখা উচিত নয়:
অনেকেই ধারণা করেন দরজার খোপে দুধ বা ডিম রাখার জন্যই আলাদা করে জায়গা করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা একমত — এই জায়গায় কখনোই রাখা উচিত নয় দুধ, ডিম বা অন্যান্য তাপ-সংবেদনশীল খাবার।
ব্রায়ান কুয়ক লে বলেন,
“এই খাবারগুলোতে আগে থেকেই কিছু মাইক্রোবস (ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস) থাকে। দরজার তাপমাত্রা যদি কয়েক ডিগ্রি বাড়ে, তাহলেই সেগুলোর বংশবৃদ্ধি শুরু হয়ে যায়, যা খাবার পচে যাওয়ার পাশাপাশি বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।”
অধ্যাপক ডেটউইলার আরও বলেন, দরজার অংশে যেসব খাবার রাখলে ঝুঁকি বাড়ে, সেগুলো হলো:
-
কাঁচা মাংস (মুরগি, গরু বা মাছ)
-
দই এবং নরম চিজ
-
মেয়োনেজ ও দুধভিত্তিক ড্রেসিং (যেমন র্যাঞ্চ)
-
তাপমাত্রা-সংবেদনশীল ওষুধ (যেমন ইনসুলিন বা প্রোবায়োটিক)
এসব খাবার দরজার পরিবর্তনশীল তাপমাত্রায় রাখলে ব্যাকটেরিয়া যেমন লিস্টেরিয়া বা সালমোনেলা সহজেই বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ বা রোগপ্রবণদের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে।
তাহলে ফ্রিজের দরজায় কী রাখা যাবে?
সুখবর হলো, ফ্রিজের দরজা পুরোপুরি পরিত্যাগ করার দরকার নেই। যেসব খাবারে প্রিজারভেটিভ বেশি বা যেগুলো রুম টেম্পারেচারে রাখা যায়, সেগুলো সেখানে রাখা নিরাপদ।
লে বলেন,
“একটা সাধারণ নিয়ম হলো — যেসব খাবার রুম টেম্পারেচারে রাখা যায় বা যাতে সংরক্ষণ উপাদান বেশি থাকে, সেগুলো দরজায় রাখা যায়।”
ফলে আপনি নিশ্চিন্তে দরজায় রাখতে পারেন:
-
সস (মাস্টার্ড, সয়া সস, হট সস)
-
আচার
-
জ্যাম বা জেলি
কিন্তু দুধ বা দই সেখানে রাখলে তা দ্রুত নষ্ট হবে — এবং আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে।
অধ্যাপক ডেটউইলারের ভাষায়, “ফ্রিজের গুছানো অবস্থান শুধু শৃঙ্খলার ব্যাপার নয় — এটা আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রশ্ন।”
ইমরান