অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হুররেম সুলতান, যিনি ছিলেন সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট-এর স্ত্রী এবং ষোড়শ শতকের অটোমান রাজনীতিতে এক বিপ্লবী চরিত্র।
হুররেম, যার আরেক পরিচিত নাম রক্সেলানা, কেবল একজন স্ত্রী বা হারেমের সদস্য নন, বরং দাসত্ব থেকে উঠে এসে সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছানো এক ব্যতিক্রমী নারী। তার জীবনের এই উত্থান অটোমান রাজনীতিতে ‘নারীদের সালতানাত’ নামে একটি যুগের সূচনা করে।
তার মৃত্যুর ৪০০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও হুররেম সুলতানের জীবন ও পরিচয় ঘিরে রহস্য আজও ইতিহাসবিদদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
তুর্কি ভাষায় ‘কাদিনইয়ার সালতানাতে’ বা ‘নারীদের শাসন’-এর সূচনা হয়েছিল মূলত হুররেমের প্রভাব থেকেই।
অটোমান প্রাসাদের ‘হারেম’ ছিল নারীদের বসবাসের পৃথক এলাকা, যেখানে সুলতানের স্ত্রী, উপপত্নী এবং দাসীরা থাকতেন। সেখান থেকেই হুররেম ধাপে ধাপে ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছান।
তবে তার প্রকৃত পরিচয় নিয়ে ইতিহাসে রয়েছে নানা মত। কেউ বলেন তিনি ইউক্রেনের রুথেনিয়ান বংশোদ্ভূত এক ধর্মযাজকের কন্যা, আবার কেউ দাবি করেন তিনি ছিলেন ইতালির সিয়েনা অঞ্চলের অভিজাত পরিবারের সদস্য মার্গেরিটা, যাকে জলদস্যুরা অপহরণ করে অটোমান দরবারে বিক্রি করে দেয়।
গবেষক ড. রিনালদো মারমারা দাবি করেন, তিনি ভ্যাটিকানের একটি পুরনো পাণ্ডুলিপিতে হুররেমকে ইতালীয় অভিজাত রমণী হিসেবে শনাক্ত করেছেন। তবে অনেক ইতিহাসবিদ এই দাবিকে সন্দেহের চোখে দেখেন।
তারা মনে করেন, ভেনিসীয় রাষ্ট্রদূতের প্রাচীন রেকর্ডে এমন কোনো উল্লেখ না থাকায় মারমারার দাবি আরও যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
হুররেম শুধু রাজনীতিতে নয়, সমাজসেবার কাজেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ইস্তাম্বুল ও জেরুসালেমে তিনি মসজিদ, হাসপাতাল, দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও স্যুপ কিচেন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৫৫৮ সালের ১৫ এপ্রিল ইস্তাম্বুলে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন হুররেম সুলতান। তাকে সুলেমানিয়ে মসজিদের প্রাঙ্গণে সমাধিস্থ করা হয়, যেখানে পরবর্তীতে একটি সমাধি নির্মাণ করা হয়।
হুররেম ছিলেন একাধারে প্রেমিকা, পরামর্শদাতা, দাতা ও কূটনীতিক। তার জীবন ইতিহাসের পাতায় চিরকাল এক রহস্যময়, প্রভাবশালী ও বিতর্কিত অধ্যায় হয়ে থাকবে।
Jahan
