ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বুড়িয়ে যাচ্ছে জাপান, আসছে ভয়ংকর বিপর্যয়!

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ৮ জুন ২০২৫

বুড়িয়ে যাচ্ছে জাপান, আসছে ভয়ংকর বিপর্যয়!

ছবি:সংগৃহীত

বিশ্বের অন্যতম মানবসম্পদ গড়ার দেশ হিসেবে পরিচিত জাপান এখন এক ভয়াবহ জনসংখ্যা সংকটে পড়েছে। দেশটিতে ২০২৪ সালে জন্মহার প্রথমবারের মতো ৭ লাখের নিচে নেমে এসেছে। সরকারি হিসাব বলছে, এ বছর নবজাতকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬১ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ৪১,২২৭ জন কম। ১৮৯৯ সাল থেকে শুরু হওয়া রেকর্ড অনুযায়ী এটি এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন জন্মহার।

 

 

জাপানের এই পরিস্থিতিকে “নীরব জরুরি অবস্থা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। তিনি পরিবারবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ এবং কর্মস্থলে নমনীয় সময়সূচি প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে নাগরিকরা সন্তান জন্মদানে আগ্রহী হন।

 

 

 

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, জাপান বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বয়স্ক জনগোষ্ঠীর দেশ। প্রথম অবস্থানে রয়েছে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মোনাকো। জাপানে প্রতি নারীর সন্তান জন্মদানের গড় হার ২০২৪ সালে নেমে দাঁড়িয়েছে ১.১৫, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন। একই বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ, যা আগের বছরের তুলনায় ১.৯ শতাংশ বেশি।

এদিকে, বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০,০০০-এরও বেশি সম্প্রদায়ে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের আধিক্য রয়েছে, অনেক গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ছে।

 

১২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার জাপান বর্তমানে চরম শ্রমিক সংকটে ভুগছে। একদিকে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ, অন্যদিকে কঠোর অভিবাসন নীতি,—এই দুটি কারণেই শ্রমবাজার সংকট তীব্রতর হচ্ছে। যদিও নারীরা এবং বয়স্করা আগের তুলনায় বেশি হারে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছেন, তবুও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানে টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। শুধু তা-ই নয়, জনসংখ্যা হ্রাস রোধে জন্মহার বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত জাতীয় কৌশল এখন সময়ের দাবি।

কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বিয়ের সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা এখনও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ২০২৪ সালে বিয়ের সংখ্যা ছিল ৫ লাখের নিচে। ফলে জন্মহার বৃদ্ধির সম্ভাবনায়ও ধাক্কা লাগছে।

জাপানের এই জনসংখ্যা সংকট শুধু দেশটিরই নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। জনসংখ্যা হ্রাস এবং কর্মক্ষম মানুষের ঘাটতি একটি জাতির ভবিষ্যতের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ছায়া ফেলতে পারে, এটি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে জাপানের অভিজ্ঞতায়।
 

ছামিয়া

×