ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পেটের রহস্যময় অসুখ: আইবিএস কী, কেন হয়, কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন?

প্রকাশিত: ২১:০০, ৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ২১:০০, ৮ জুন ২০২৫

পেটের রহস্যময় অসুখ: আইবিএস কী, কেন হয়, কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন?

পেট ব্যথা, বারবার পাতলা পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ফাঁপা পেট—এই উপসর্গগুলোকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এগুলো হতে পারে ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস-এর লক্ষণ। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই দীর্ঘমেয়াদি হজমজনিত সমস্যায় ভোগেন, যা জীবনের স্বাভাবিক গতিকে প্রভাবিত করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইবিএস হচ্ছে অন্ত্রের একটি কার্যকরী ব্যাধি, যেখানে হজমতন্ত্র ঠিকভাবে কাজ না করায় খাবার অতিরিক্ত ধীরে বা দ্রুত অন্ত্র দিয়ে চলে যায়। এতে পেট ব্যথা, অস্বস্তি, ফোলাভাব ও অস্বাভাবিক মলত্যাগ দেখা যায়। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) বলছে, প্রতি পাঁচজনের একজন এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, যেখানে নারীদের ও এশিয়ান শিশুদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি।

লক্ষণগুলো কী কী?

  • দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য

  • তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা, যা টয়লেটে গেলে কমে

  • পেট ফুলে থাকা, ঢেকুর ওঠা

  • হঠাৎ মলত্যাগের বেগ বা অসম্পূর্ণ মলত্যাগের অনুভূতি

  • শ্লেষ্মাযুক্ত মল, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ

  • বমিভাব, ক্লান্তি, বুক জ্বালাপোড়া, যৌনতার সময় ব্যথা

এসব লক্ষণ যদি কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে চলতে থাকে, তাহলে আইবিএস হতে পারে।

কী কারণে হয়?

আইবিএস-এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে মানসিক চাপ, এলোমেলো জীবনযাত্রা, পারিবারিক ইতিহাস এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবার এই অসুখকে বাড়িয়ে দিতে পারে। চা-কফি, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত মসলা বা চর্বিযুক্ত খাবার অনেকের জন্য সমস্যা বাড়ায়।

কীভাবে রোগ নির্ণয় হয়?

আইবিএস শনাক্তে নির্দিষ্ট কোনও টেস্ট নেই। রক্ত ও মল পরীক্ষার মাধ্যমে অন্যান্য জটিল রোগ বাদ দিয়ে লক্ষণ দেখে চিকিৎসক রোগ শনাক্ত করেন।

চিকিৎসা কী?

এই রোগ পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য না হলেও জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং লক্ষণভিত্তিক ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

  • কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে আঁশযুক্ত খাবার: ওটস, ডাল, বার্লি

  • ডায়রিয়া থাকলে কম আঁশযুক্ত খাবার: বাদামি রুটি, বাদামি চাল

  • ফল সীমিত পরিমাণে (প্রতি দিন সর্বোচ্চ ২৪০ গ্রাম)

  • পেটের সমস্যা বাড়ায় এমন খাবার এড়িয়ে চলা: বাঁধাকপি, ব্রোকলি, পেঁয়াজ

  • পর্যাপ্ত পানি পান, দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ঘাম ঝরানো ব্যায়াম

  • রাতের ঘুম ৮-৯ ঘণ্টা

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?

যদি উপসর্গগুলো এক সপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী হয়, মলের সঙ্গে রক্ত আসে, পেটের ব্যথায় ঘুম ভেঙে যায়, অজান্তেই ওজন কমে যায় বা রোগীর বয়স ৫০ বছরের বেশি হয়, তাহলে দ্রুত গ্যাস্ট্রোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

অনেকে আইবিএস নিয়ে কথা বলাকে লজ্জাজনক মনে করেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা এই বিষয়ে নীরব থাকতে চান। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপই এই দীর্ঘমেয়াদি অসুখকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন—পেটের যত্নে অবহেলা নয়।

Jahan

×