
ছবি: সংগৃহীত
এক সময় কুরবানির ঈদ মানেই ছিল আত্মীয়তার টান, প্রতিবেশীর হাসিমুখ আর ঘরে ঘরে মাংস বিলির আনন্দ। কিন্তু সময় বদলেছে। বদলেছে মানুষের মনোভাব, বদলেছে সামাজিক সম্পর্কের ধরনও। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় এবারের কুরবানির ঈদে তারই এক বাস্তব চিত্র দেখা গেল।
সেখানে অনেক এলাকাতেই এবার কুরবানির মাংস নিতে মানুষ পাওয়া যায়নি। আগের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ আর অপেক্ষা করেনি একটুকরো মাংসের জন্য।
সদরের উত্তরা বাজার এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক জেলা পরিষদের মহিলা সদস্য মুসনেয়ারা হক বলেন, “আগে লাইন লেগে যেত। এবার ১ কেজি মাংসও হাতে তুলে দেবো এমন কেউ ছিল না। শেষে আমি নিজেই কয়েকটা পরিবারে পৌঁছে দিয়েছি।”
তার ছেলে জীবন বলেন, “মা সবসময় ঈদের আনন্দ অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইতেন। এবার মানুষ এমনভাবে নিরাসক্ত থাকায় কষ্ট পেয়েছি।”
স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী মজিবর রহমান জানান, “আগে পরিচিতজনেরা ভোরেই চলে আসত। এবার তাদের অনেককেই দেখা যায়নি। আগ্রহটা নেই বললেই চলে।”
রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু বলেন, “আমার বাড়িতে এবারও অনেকে এসেছেন, তবে যারা প্রতিবছর নির্ধারিতভাবে আসতেন, তাদের অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন।”
এই সামাজিক পরিবর্তনের পেছনে কারণ কী? স্থানীয় সমাজসেবক আব্দুল মালিক মানিক বলেন, “মানুষ দিন দিন একা হয়ে পড়ছে। আত্মীয়তা, সহানুভূতি এসব এখন বইয়ের ভাষা হয়ে গেছে। একসময় কুরবানির দিন মানেই ছিল হাসিমুখে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা কিন্তু আজ তার কিছু নেই।”
সামাজিক কর্মী ও শিক্ষক তুক্তু বলেন, “এই পরিবর্তন শুধু সামাজিক নয়, মনস্তাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিকও। মানুষের জীবনযাপন বদলেছে, বদলেছে উৎসব উদযাপনের ধরন। শহরমুখী জীবনের ব্যস্ততা, সম্পর্কের দূরত্ব এবং সময়ের সংকট এর পেছনে বড় কারণ।”
একটা সময় ঈদের সকাল মানেই ছিল রান্নাঘরের গন্ধ, রাস্তায় ছুটে বেড়ানো শিশু, আর দরজায় দাঁড়িয়ে মাংস নিতে আসা চেনা মুখগুলো। আজ, সেসব দৃশ্য যেন অপরিচিত।
মুমু ২