
ছবিঃ জনকণ্ঠ
'মা, আব্বা আর দুই বোন ছাড়া আমাকে কেউ পছন্দ করে না। স্কুলে কেউ আমার কাছে আসতে চায় না চামচ দিয়ে ভাত খাই। অন্য বন্ধুদের মতো খেলতে পারি না। কোনো কাজ করতে পারি না।
মাত্র ১৫ বছর বয়সী শিশুটি খুব নীচু সুরে কথাগুলো বলছিল। তার ছোট্ট বুকটা চিরে বের হয়ে আসছিল হাহাকার। জন্মের ৬ মাসের মাথায় অজ্ঞাত এক জটিল রোগে আক্রান্ত হয় সে। শুকনো ঘায়ে ভরে গেছে তার হাত ও পায়ের তালু সহ তার মাথা।
এ অজ্ঞাত রোগে বন্দি পড়েছে তার শৈশব। অনেকেই তাকে 'বৃক্ষ শিশু' বলেই জানেন। তার হাত ও পায়ের তালু দেখলে মনে হবে ওগুলো যেন কোনো পুরোনো বৃক্ষের ছালবাকল ঢেকে রেখেছে।
বৃক্ষ শিশু খ্যাত রিপন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের কেটগাঁও গ্রামের ভ্যান চালকের কাজে নিয়োজিত দরিদ্র মহেন্দ্রনাথ রায়ের একমাত্র ছেলে।
প্রায় ৭ বছর আগে ২০১৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে চিকিৎসা নিয়ে নিজ গ্রাম ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ফেরেন রিপন। সেখানে তিনটি অপারেশন করার পর কিছুটা সুস্থ হন। বর্তমানে আবারো শিকড়ের মত গজিয়ে দু হাত ও পা হয়েছে আগের মতো। এই দুই হাত দিয়েই করছে রিপন যাবতীয় কাজ।
কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছর আগে নিজ বাড়িতে এসে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হওয়ায় বর্তমানে দিন দিন খারাপ হচ্ছে তার শরীর। বর্তমানে হাত ও পায়ের ব্যথায় কাতরাচ্ছে সে।
বর্তমান উপজেলার পিএস উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে সে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সে।
শিশু রিপনের বাবা ভ্যানচালক মহেন্দ্রনাথ রায় জানান, রিপন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না কিংবা হাত দিয়ে খাওয়া-দাওয়াও করতে পারে না। এ অবস্থা দেখে তার সাথে কেউ খেলতেও চায় না।
রিপনের মা গোলাপি রাণী জানান, ডাক্তার দেখিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিল কোন ফল হয়নি।
গত ৭ বছর আগে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয়েকবার অপারেশন করা হয়। ফলে কিছুটা সুস্থ হয় রিপন।
বর্তমানে রিপন তার বাড়িতে ৭বছর ধরে অবস্থান করছেন। কিন্তু কোনো প্রকার ঔষধ-পত্র কেনার টাকা নেই পরিবারের। কোনো সরকারি সহযোগিতা বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতা না পাওয়ায় থমকে গেছে তার চিকিৎসা, বিপাকে পড়েছেন তারা। ফলে দিন দিন তার রোগটি বেড়েই চলছে।
এ ব্যাপারে ৮ নং দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান কার্তিক চন্দ্র রায় জানান, এ রোগের চিকিৎসা করা ব্যয়বহুল। সরকার ও সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসলে চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। তার বাবা-মা খুবই গরীব। তাকে চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
সাব্বির