ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হজের সময় কেন শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা হয়?

প্রকাশিত: ১৮:২২, ৮ জুন ২০২৫

হজের সময় কেন শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা হয়?

শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে দূরে থাকার প্রতীকী অঙ্গীকার হিসেবে কঙ্কর নিক্ষেপ করে থাকেন

হজের জন্য মক্কায় একত্রিত হওয়া লাখ লাখ মুসলিমের জন্য এক আবেগ ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য জীবনভর টাকা জমানো, এমনকি শখের জায়গা-জমি বিক্রি করে হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে পাড়ি জমানো এক সাধারণ চিত্র।  হজের চতুর্থ দিন, অর্থাৎ ১১ জিলহজ, হজের অন্যতম মূল কাজ হলো তিন জামারাতে ৭টি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা। প্রথম ও দ্বিতীয় জামারাতে পাথর নিক্ষেপ শেষে হাজিরা হাত তুলে দোয়া করেন, যেখানে দোয়া কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য

পবিত্র হজের অন্যতম ওয়াজিব বিধান হলো জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। শয়তানকে উদ্দেশ্য করে হজযাত্রীরা তিনটি স্থানে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন, যা 'রামি' নামে পরিচিত। যদিও এই তিনটি স্থানে বর্তমানে শয়তান বিদ্যমান নেই, কিন্তু হজযাত্রীদের কঙ্কর নিক্ষেপণ দেখে শয়তান অপমানে জ্বলতে থাকে।

এই পাথর নিক্ষেপ মূলত খলিলুল্লাহ হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রতীকী আমল হিসেবে পালন করেন হাজিরা। ইতিহাসের সেই স্মৃতিবিজড়িত ঘটনাটি ছিল এরকম: হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন শিশুপুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কোরবানি করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান তিন স্থানে তার সামনে এসে কুমন্ত্রণা দিচ্ছিল, যাতে কোরবানি বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু ইবরাহিম আলাইহিস সালাম প্রতিটি স্থানেই শয়তানকে সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করে বিতাড়ন করেছিলেন এবং আল্লাহর আদেশ পালনে নিঃসন্তানকে মাটিতে শায়িত করেছিলেন।

স্মৃতিবিজড়িত সেই ঘটনাকে চিরজাগ্রত রাখার জন্য কঙ্কর নিক্ষেপকে হজের বিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন হজের বিধি-বিধান আদায় করছিলেন। তখন জামরায়ে আকাবার কাছে তাঁর সামনে শয়তান উপস্থিত হল। তিনি শয়তানকে সাতটি পাথর মারলেন। ফলে সে মাটিতে ঢুকে গেল। এরপর সে আবার দ্বিতীয় জামরায় উপস্থিত হল। তিনি আবার সাতটি পাথর মারলেন। ফলে সে মাটিতে ঢুকে গেল। এরপর সে আবার তৃতীয় জামরায় উপস্থিত হল। তিনি আবার সাতটি পাথর মারলেন। ফলে সে মাটিতে ঢুকে গেল।

তবে এটা মনে করা কখনো সমীচীন হবে না যে, বর্তমানে যারা পাথর নিক্ষেপ করছে তারা আক্ষরিক অর্থে শয়তানকে আঘাত করছে, বরং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করেই হাজিরা আল্লাহর জিকিরকে সমুন্নত রাখার জন্য এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে দূরে থাকার প্রতীকী অঙ্গীকার হিসেবে কঙ্কর নিক্ষেপ করে থাকেন। এটি আল্লাহর প্রতি অবিচল আনুগত্য এবং ইবরাহিম (আ.)-এর ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোরই এক অংশ।

সাব্বির

×