ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত খুশির ঈদ: ঈদুল আযহার শিক্ষা ও আমাদের করণীয়

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৭ জুন ২০২৫

ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত খুশির ঈদ: ঈদুল আযহার শিক্ষা ও আমাদের করণীয়

ছবি: প্রতীকী

ঈদুল আযহা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য খুশির দিন, একইসঙ্গে এটি ত্যাগ ও উৎসর্গের মহান শিক্ষা বহন করে। আজ শনিবার, ১০ জিলহজ, বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান ঈদুল আযহার বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবে শামিল হয়েছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সামর্থ্যবান মুসলমানরা আজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি করছেন। আর এই কুরবানির মাধ্যমে ইসলামের এক মহান আদর্শের প্রতিফলন ঘটছে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে উৎসবের আমেজ। শহর থেকে গ্রাম—সবখানেই ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিরা ভোরে ঈদগাহে ছুটছেন। ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, প্রান্তিক ও নগরজীবী—সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের জামাতে শামিল হবেন, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমতের প্রার্থনা করবেন।

এবারের ঈদুল আযহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৭টায়। জামাতে অংশ নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, রাজনীতিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এবং নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. আবদুল মালেক।

ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঈদ জামাত ও কোরবানির স্থানে সতর্ক নজরদারি চালায়। প্রতিবারের মতো এবারও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ঈদের মূল বার্তা: আত্মত্যাগ ও সহমর্মিতা

পবিত্র ঈদুল আযহার মূল শিক্ষা ত্যাগ, ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণ। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রিয়তম পুত্রকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, আর তা থেকেই মুসলমানরা কুরবানির আদেশ পালন করেন। কিন্তু কুরবানির প্রকৃত মর্মবাণী কেবল পশু জবেহেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহ চান মানুষ যেন অন্তরের পশুত্ব, লোভ, অহংকার ও হিংসার প্রবৃত্তিকে কুরবানি করে আত্মিক শুদ্ধি অর্জন করে।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কুরবানির মাংস বা এদের রক্ত কখনো আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তার কাছে তোমাদের পক্ষ থেকে তাকওয়া পৌঁছে’ (সুরা হজ, আয়াত : ৩৭)। অর্থাৎ কুরবানির বাহ্যিক আড়ম্বর নয়, বরং অন্তরের খাঁটি নিয়ত ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাই আসল।

কুরবানির মাংস বণ্টনে চাই সততা ও সহানুভূতি

ইসলাম ধর্মে কুরবানির মাংস আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে বণ্টন করার আদেশ রয়েছে। এ আদর্শ সামনে রেখে দেশের হাজারো মানুষ আজ কুরবানির মাংস বণ্টন করবেন। কেউ কুরবানি না করলেও প্রতিবেশী যদি তার পাশে দাঁড়ায়, তবেই ঈদের প্রকৃত আনন্দ সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।

দেশজুড়ে ঈদ জামাতের আয়োজন

ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ছাড়াও বায়তুল মোকাররমে মোট পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টা থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৯টায়, যেখানে ইমামতি করেন জেলা শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা আবুল খায়ের মো. সাইফুল্লাহ। ঈদের জামাত উপলক্ষে এবারও ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে আয়োজিত ঈদ জামাতও উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে। আয়োজকদের দাবি, প্রায় ২২ একর মাঠে পাঁচ থেকে ছয় লাখ মানুষ একত্রে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। এখানে জামাত শুরু হবে সকাল সাড়ে ৮টায়।

ঈদের শিক্ষা সারাবছর বহন করুন

ঈদুল আযহা কেবল উৎসবের দিন নয়, বরং এটি আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা, এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন। ঈদের নামাজের পর কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বের যে বন্ধন গড়ে উঠে, সেটিই আমাদের সারাবছর ধরে রাখতে হবে। ঈদের দিনে ধনী-গরিবের মাঝে যে সাম্যবোধ প্রতিষ্ঠা হয়, তা যেন কেবল একটি দিনের আনুষ্ঠানিকতায় আটকে না থাকে।

সবার মধ্যে যেন জেগে ওঠে মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মানবিকতা এবং মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের অনুভব। তাহলেই কুরবানির প্রকৃত অর্থ আমরা উপলব্ধি করতে পারব।

বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর জন্য শান্তি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণ কামনায় শেষ হোক ঈদের এ দিনের প্রার্থনা। সবাইকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।

রাকিব

×