ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক ভাবনায় ভারতের প্রভাব

লে. কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমান

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৮:০৩, ৭ জুন ২০২৫

নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক ভাবনায় ভারতের প্রভাব

ছবি:সংগৃহীত

সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ৭ জুন ২০২৩ সালের একটি লেখা রিপোস্ট করে ভারতীয় সেনাপ্রধানের  বাংলাদেশ সফর এবং সেনা প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত কৌশলগত ভাষ্য (ন্যারেটিভ) নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন।

 

 

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণে কাল্পনিক রাষ্ট্র “উল্ফল্যান্ড” ও “গ্রীনল্যান্ড” এর উদাহরণ দিয়ে যে কৌশলগত অনুশীলন চলে, তা মূলত প্রতিবেশী ভারতের সামরিক অবস্থানের প্রতিচ্ছবি বহন করে।

তিনি লিখেছেন,
“ভারতীয় অফিসাররা যখন আমাদের এসআইএন্ডটি বা অন্যান্য মিলিটারি স্কুলে প্রশিক্ষণে আসতেন, তখন বুঝতেন উল্ফল্যান্ড মানে ভারত। কিন্তু কখনো মুখে কিছু বলতেন না।”

ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মুস্তাফিজ লেখেন,
“ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র বলা হলেও তাদের বিএসএফ প্রতিবছর আমাদের ৪০–৬০ জন নাগরিককে হত্যা করে। আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তারা নেপাল-ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধা নেয়, অথচ আমাদের ব্যবসায়িক ঘাটতি বাড়ছেই।”

 

 

তিনি অভিযোগ করেন, সরকার ভারতের কাছে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে এবং তা সেনাবাহিনীকেও প্রভাবিত করছে।

তিনি আরও লেখেন,
“ভারতের নতুন সংসদ ভবনে অখণ্ড ভারতের ম্যুরাল রয়েছে। আরএসএস ও অন্যান্য মৌলবাদী দলগুলো চায় একদিন পুরো অঞ্চল তাদের দখলে আসুক, যেখানে মুসলমানদের কোনো ভোটাধিকার থাকবে না।”

সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি তুলে ধরেন ২০১১ সালের একটি অভিজ্ঞতা, যখন তিনি ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ছিলেন এবং ভারতীয় কমান্ডোদের সঙ্গে যৌথ অনুশীলনে অংশ নেন।

পরবর্তী বছর বাংলাদেশের একটি দল ভারতের আগ্রায় যৌথ প্রশিক্ষণে গেলে তারা জানতে পারে, ভারত তাদের ১৬টি পদাতিক ব্যাটালিয়নকে প্যারা ইনফ্যান্ট্রিতে রূপান্তর করছে, যাদের প্যারাড্রপের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের পেছনে যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতা থাকবে।

এরপর সেনাপ্রধানের বদলের সময় সেনাসদর থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্যারা ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের টিওএন্ডই (TO\&E) বা ইউনিট কাঠামো সংক্রান্ত তথ্য। তিনি তখন প্রশ্ন তোলেন,
“যেখানে এক বছরে আমাদের কমান্ডো সৈন্যদের নিয়মিত মাত্র দুটি প্যারাজাম্প করানোই কঠিন, সেখানে রেগুলার ব্যাটালিয়নকে প্যারা ইউনিট বানানো কতটা যৌক্তিক?”

পরে তিনি সেনাসদরে একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন দেন, যাতে তিনি উল্লেখ করেন—বাংলাদেশে প্রশিক্ষিত কমান্ডোর সংখ্যা পর্যাপ্ত, ফলে নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রয়োজন থাকলেও সেটি কমান্ডো থেকে হওয়া উচিত, সাধারণ পদাতিক থেকে নয়।

 

পোস্টের শেষাংশে মুস্তাফিজুর রহমান লেখেন,
“সত্য সমাগত, মিথ্যা বিতাড়িত। চলবে...”

পোস্টটির সঙ্গে তিনি সিলেট পানিছড়া ড্রপ জোনে নতুন প্যারাট্রুপারদের ব্রেভেট পরিধানের একটি ছবিও যুক্ত করেছেন।

 

লেখক: লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান

সূত্র: লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান  এর ভেরিফাইড ফেসবুক প্রোফাইল

আঁখি

×