
ছবিঃ সংগৃহীত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশুর চামড়ার ভালো দাম পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। অনেক সময় খুবই কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। তবে এবছর উপজেলার অনেক জায়গায় চামড়া বিক্রি তো দূরের কথা, চামড়ার ক্রেতারও দেখা মেলেনি। কোথাও কোথাও ক্রেতা এলেও ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। খাসির চামড়া কেউ কিনছেই না।
উপজেলার পৌর শহরসহ বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে। আশানুরূপ দাম না পেয়ে অনেকে চামড়া মাদ্রাসায় দান করেছেন। কোথাও আবার মাটিচাপা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে চামড়ার দাম না পেয়ে হতাশ কোরবানি দেওয়া মানুষজন। তাদের অভিযোগ—এটা গরিবের হক। কিছু মুনাফালোভী সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। পরে তারা কৌশলে কম দামে চামড়া কিনে নিচ্ছে।
তারা বলেন, চামড়ার তৈরি জুতা, বেল্ট, ব্যাগ কিনতে অনেক টাকা লাগে, তাহলে কাঁচা চামড়ার এত কম দাম হবে কেন?
শনিবার (৭ জুন) দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবছর চামড়ার মৌসুমি ক্রেতারা আসেননি। কোথাও এলেও চামড়ার দর বলেছে খুবই কম। বাধ্য হয়ে অনেকে কম দামে বিক্রি করেছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ মাদ্রাসায় চামড়া দান করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, “চামড়া ব্যবসায়ীরা মাদ্রাসা থেকেই পরে কম দামে চামড়া কিনে নেবেন, তাই বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন না।”
পৌর শহরের দুর্গাপুর গ্রামের আবেদ আলী বলেন, “চামড়া কিনতে কেউ আসেনি। ভাবছি মাদ্রাসায় দিয়ে দেব।” এমন চিত্র পুরো আখাউড়া উপজেলাজুড়েই। কোথাও কোথাও ক্রেতা থাকলেও গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০০-৩০০ টাকায়।
নারায়ণপুর গ্রামের কয়েকজন জানান, ক্রেতা না পেয়ে তারা মাদ্রাসায় চামড়া দান করেছেন।
খড়মপুর মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম খাদেম বলেন, “হয়তো চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কেনাবেচা করছে না। পরে কম দামে কিনবে। এটা গরিবদের হক, কিন্তু কিছু মানুষ কৌশলে তা কেড়ে নিচ্ছে। চামড়ার জুতা বা বেল্টের দাম অনেক, তাহলে কাঁচা চামড়ার দাম থাকবে না কেন?”
আখাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, “সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাহলে চামড়ার দাম বাড়বে না কেন? অথচ চামড়াজাত পণ্যের দাম অনেক বেশি। মনে হচ্ছে সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে রাখা হয়েছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙা দরকার। চামড়া একসময় ছিল দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। দাম বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসবে। গরিব-দুঃস্থদের হক ছিল চামড়ার টাকায়, কিন্তু এখন তা নষ্ট হচ্ছে।”
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, “সরকার এবছর চামড়ার ভালো দাম নির্ধারণ করেছে। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে দাম কারসাজি করলে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বছর আখাউড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১২ হাজার ৪০০টি কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।
ইমরান