
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহা আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিনে কোরবানির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু উৎসর্গ করি। কিন্তু কোরবানির এই ধর্মীয় অনুশীলনের পরপরই একটি বড় সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সামনে চলে আসে— বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
কোরবানির পশুর রক্ত, চামড়া, অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ অন্যান্য বর্জ্য যদি সঠিকভাবে অপসারণ না করা হয়, তবে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ফলে শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশন নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।
ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে কোরবানির সময় প্রতিদিন হাজার হাজার পশু জবেহ করা হয়। এর ফলে প্রতিটি গলিতে, মোড়ে, খোলা জায়গায় জমে থাকে মাংসের টুকরো, হাড়, রক্ত এবং অন্যান্য আবর্জনা। বৃষ্টির পানি এই বর্জ্যকে আরও ছড়িয়ে দেয়, যার ফলে শহরে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং রোগজীবাণুর উপদ্রব বাড়ে। এ অবস্থায় পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় নাগরিক সচেতনতা জরুরি না হয়ে উপায় নেই।
কোরবানির আগে থেকেই প্রয়োজন পরিকল্পনা। যেখানে পশু কোরবানি দেওয়া হবে, সেই জায়গাটি যেন ড্রেনের মুখে না হয় কিংবা জনসমাগম এলাকায় না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ রাস্তার মাঝখানে বা ড্রেনের পাশে কোরবানি দিচ্ছেন, যা আশপাশের মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে।
কোরবানির পরপরই বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিতে হবে। অনেক সিটি করপোরেশন এখন নির্দিষ্ট ব্যাগ, জীবাণুনাশক ও পরিষ্কার কর্মী নিয়োগ করে থাকেন— তবে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।
পরিচ্ছন্নতা শুধু প্রশাসনের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। নিজেদের ঘর যেমন পরিষ্কার রাখি, তেমনি আমাদের আশপাশও পরিষ্কার রাখতে হবে। বাচ্চাদের শিখাতে হবে পরিবেশ সচেতনতা, যাতে তারা বড় হয়ে নিজ দায়িত্বে সচেতন নাগরিক হয়ে ওঠে।
ধর্ম আমাদের পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দেয়। তাই, ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ রক্ষাও আমাদের ঈমানী দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
একটি পরিচ্ছন্ন শহর, একটি স্বাস্থ্যকর সমাজ গঠনে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি। আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ ও দায়িত্ববোধই পারে কোরবানির আনন্দকে সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ করে তুলতে।
লেখক: সাংবাদিক
এম.কে.