ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কুরবানির আদর্শে মানবতা ও পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা কুরবানিতে আমাদের করণীয়

মোঃ আল-মুকিদ (মাহি), কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ৫ জুন ২০২৫

কুরবানির আদর্শে মানবতা ও পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা কুরবানিতে আমাদের করণীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক ত্যাগ, সমবেদনা ও মানবিকতার মহান বার্তা। হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজ পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি দিতে প্রস্তুত হয়ে যে আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, সেটিই আজও কুরবানির মূল শিক্ষা হিসেবে সমুজ্জ্বল। তবে আধুনিক নগরজীবন ও পরিবেশগত বাস্তবতায় এই ধর্মীয় উৎসব পালনে কিছু বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতা রক্ষা ও জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে কুরবানিতে আমাদের করণীয় কী, তা নিচে তুলে ধরা হলো:

১. খাঁটি নিয়ত ও শরিয়ত মেনে চলা কুরবানি হতে হবে নিছক রীতিনিষ্ঠ নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিরেট ইচ্ছা থেকেই। পশু জবাইয়ের সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলা ফরজ, অন্যথায় তা গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো ধরনের অহংকার বা লোক দেখানোর মানসিকতা এক্ষেত্রে অনুচিত।

২. সুস্থ ও উপযুক্ত পশু নির্বাচন শরিয়ত অনুযায়ী গরু বা মহিষ হলে দুই বছর, ছাগল বা ভেড়া হলে এক বছর বয়স পূর্ণ হতে হবে। চোখ, কান, শিং, দাঁত ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কোনো ধরনের ত্রুটি থাকা যাবে না। রোগাক্রান্ত বা দুর্বল পশু কুরবানির উপযোগী নয়।

৩. নির্ধারিত স্থানে জবাই ও স্বাস্থ্যবিধি শহরাঞ্চলে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে কুরবানি করাই শ্রেয়। যেখানে ব্যক্তিগতভাবে কুরবানি করা হয়, সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি ও পরিবেশ-সচেতনতা মেনে চলা জরুরি। খোলা জায়গায়, রাস্তার ধারে কিংবা ড্রেনের পাশে পশু জবাই থেকে বিরত থাকা উচিত।

৪. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীলতা কুরবানির পরে রক্ত ও বর্জ্য যথাযথভাবে পরিষ্কার না করা হলে তা দুর্গন্ধ, মশা-মাছির উপদ্রব এবং রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ব্যাগে বর্জ্য প্যাকেট করে সঠিক স্থানে ফেলা এবং জীবাণুনাশক ছিটানো আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।

৫. গরিব-দুস্থদের হক আদায় কুরবানির মূল উদ্দেশ্য আত্মত্যাগ এবং সামাজিক সমতা। তাই মাংস বণ্টনের সময় পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী ছাড়াও সমাজের হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে কুরবানির অংশ পৌঁছে দেওয়াই প্রকৃত সাওয়াবের কাজ।

৬. আইন-শৃঙ্খলা ও মানবিক সচেতনতা পশু পরিবহনে নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলা, কোরবানির আগে পশুকে অপ্রয়োজনে টানাহেঁচড়া বা পীড়ন না করা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের দিয়ে জবাই না করানো ইসলামি শিক্ষারও পরিপন্থী। সামাজিক মাধ্যমে পশু প্রদর্শনের মাধ্যমে অহংকার প্রকাশ একেবারেই অনুচিত।

৭. কুরবানির পর পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ রক্ষাজবাই-পরবর্তী পরিচ্ছন্নতা ঈমানি দায়িত্ব। নিকটস্থ নালা, খোলা জায়গা বা রাস্তা রক্তে রঞ্জিত না করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে স্থানটি পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা শুধু পশু কোরবানিতে সীমাবদ্ধ নয়—বরং আত্মশুদ্ধি, সহমর্মিতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলাই এর মূল বার্তা। আমাদের সবার সচেতন অংশগ্রহণে এই ধর্মীয় উৎসব হয়ে উঠুক পরিচ্ছন্নতা, মানবতা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক অনন্য উপলক্ষ।

নোভা

×