
ছবি:জনকণ্ঠ
বাংলাদেশে বর্ষাকাল এলেই বজ্রপাতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকে। প্রতি বছর শত শত মানুষ বজ্রপাতের কারণে মারা যায় কিংবা মারাত্মকভাবে আহত হয়। একে অনেক সময় ‘নীরব ঘাতক’ও বলা হয়ে থাকে। অথচ সচেতনতা ও পূর্বপ্রস্তুতির মাধ্যমে এই প্রাণহানির অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বজ্রপাত কীভাবে হয়?
বজ্রপাত হলো আকাশে মেঘের মধ্যে ইলেকট্রিক চার্জ জমে গেলে সেটি ভূ-পৃষ্ঠ বা অন্য কোনো মেঘে প্রবাহিত হওয়ার ফলে এক প্রকার হাই-ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়। এই বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গকেই আমরা বজ্রপাত হিসেবে দেখি এবং শুনি বিকট শব্দে।
বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রভাব
২০১৬ সালে বজ্রপাতকে বাংলাদেশ সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতি বছর বজ্রপাতে ২০০-৩০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে, যার বেশিরভাগই ঘটে গ্রামাঞ্চলে, ধানক্ষেতে বা খোলা জায়গায় কাজ করার সময়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃক্ষ নিধন ও খোলা জমির পরিমাণ বাড়ার কারণে বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ছে।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে কী করণীয়?
১. আবহাওয়া পূর্বাভাসে নজর রাখা: ঘন মেঘ, বিদ্যুৎ চমক দেখা গেলে দ্রুত আশ্রয় নেওয়া উচিত।
২. খোলা জায়গা এড়িয়ে চলুন: মাঠ, উঁচু জায়গা, গাছপালা বা টাওয়ারের নিচে থাকবেন না।
৩. বাড়ির ভিতর থাকুন: বজ্রপাতের সময় জানালা বন্ধ রাখুন এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরে থাকুন।
৪. গাড়িতে থাকলে নিরাপদ: ধাতব গঠন থাকলেও গাড়ির ভিতর থাকা তুলনামূলক নিরাপদ।
৫. গাছ লাগান: দীর্ঘমেয়াদে বজ্রপাত কমানোর জন্য প্রচুর গাছ লাগানো দরকার।
বিশেষ সতর্কতা শিশুদের জন্য:
শিশুরা খোলা মাঠে খেলাধুলা করে বলে বজ্রপাতের ঝুঁকিতে থাকে। তাই অভিভাবকদের উচিত বজ্রপাতের সময় শিশুদের নিরাপদ স্থানে রাখতে বিশেষ সচেতন থাকা।
বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলেও, এটি আমাদের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে যদি আমরা সতর্ক না থাকি। ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণহানি হ্রাস করা সম্ভব। শুধু প্রযুক্তির ওপর নির্ভর না করে স্থানীয়ভাবে মানুষকে সচেতন করে তোলাই হবে কার্যকর প্রতিকার।
আঁখি