
ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ থেকেই ইসলামের শান্তির বাণী ছড়িয়ে পড়ে দিগ্বিদিক। তার নির্দেশে সাহাবিগণ ছুটে গেছেন পৃথিবীর নানা প্রান্তে। ইসলামিক ঐতিহাসিকদের মতে, সেই সময়ই চারজন সাহাবি বাংলা অঞ্চলে এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে।
বিশ্বনবীর চাচাতো মামা হযরত আবু ওয়াক্কাস মালিক বিন ওয়াহিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সহ আরও তিনজন সাহাবি নবীজির নির্দেশে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলে এসেছিলেন। কেবল এখানেই নয়, এই সাহাবিরা আরব থেকে বাংলা হয়ে চীনের ক্যান্টন পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করেন। চীনের ঐতিহাসিক ক্যান্টন শহরে আজও হযরত আবু ওয়াক্কাস (রা.)-এর নামাঙ্কিত মসজিদ ও কবর সংরক্ষিত রয়েছে।
বাংলাদেশে ইসলামের আগমনের ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন উৎসে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর উপকূলবর্তী এলাকায় আরবি অপভ্রংশে নাম ও ভাষার উপস্থিতি, লালমনিরহাটে ৬৯ হিজরিতে নির্মিত মসজিদের ধ্বংসাবশেষ এবং কুমিল্লা, পাহাড়পুর, রাজশাহীতে আব্বাসীয় যুগের মুদ্রা—সবই প্রমাণ করে, ইসলামের প্রবেশ এই অঞ্চলে হয়েছিল হিজরী প্রথম দিকেই।
অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে আরব বণিক ও মুবাল্লিগরা সন্দ্বীপ, রামু সহ বিভিন্ন এলাকায় ইসলাম প্রচার করেন। কামরূপ ও রাহমি রাজ্যের উল্লেখ তৎকালীন আরব লেখকদের লেখায় পাওয়া যায়।
সেই সময় শুধু ইসলাম প্রচার করেই ক্ষান্ত হননি আগত সাহাবি ও তাবেঈনগণ; অনেকে স্থায়ী বসতি গড়েন। পরবর্তীকালে তাদের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ইসলামী সংস্কৃতি, ভাষা ও সমাজ গড়ে ওঠে। তুর্কি, আরব ও পারস্য থেকে আগত বহু সুফি দরবেশও এদেশে ইসলাম প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের মাধ্যমে হিন্দু-বৌদ্ধ নিপীড়িত জনগণ ইসলামে আশ্রয় নেয়।
পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে আরও বহু ইসলামী মুবাল্লিগ এদেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—শাহ মোহাম্মদ সুলতান রুমি, বাবা আদম শহীদ, শাহ মকদুম রূপস, হযরত জালালউদ্দিন তাবরিজি ও সর্বাধিক পরিচিত হযরত শাহজালাল (রহ.)। ১৩০৩ সালে শাহজালাল (রহ.) ৩৬০ জন সঙ্গী নিয়ে দিল্লি থেকে সিলেটে এসে অত্যাচারী রাজা গৌরগোবিন্দকে পরাজিত করেন। তার মাধুর্যপূর্ণ চরিত্র ও দাওয়াতি তৎপরতায় হাজার হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন।
ইতিহাসে জানা যায়, ভারত থেকে ‘রতন আল হিন্দ’ বা ‘রতন আব্দুল্লাহ’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তি মদিনায় গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করে সাহাবি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। একইভাবে মালাবারের চের রাজাও রাসূলের কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়।
বাংলাদেশে ইসলামের আগমন কেবল বণিক বা পরবর্তী সুফিদের মাধ্যমে নয়, বরং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেই শুরু হয়েছিল। সেই চারজন সাহাবির আগমন ইতিহাসের পাতায় এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। এদেশে ইসলামের বিস্তার কেবল ধর্মীয় নয়, বরং সামাজিক ন্যায়, সাম্যের বার্তা ও মানবিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত এক আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা।
নুসরাত