
ছবি: প্রতীকী
পৃথিবী আজ এক অভূতপূর্ব পরিবেশ সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। দিন দিন বাড়ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, মাটির উর্বরতা হারাচ্ছে, সাগরে প্রাণ হারাচ্ছে মাছ ও সামুদ্রিক কচ্ছপ, এমনকি মানুষের রক্তে পর্যন্ত ধরা পড়ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এই সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি ভয়ংকর উপাদান— প্লাস্টিক। ২০২৫ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তাই সারা দেশ একক কণ্ঠে উচ্চারণ করছে, ‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়।’
বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতি বছর ৫ জুন পালিত হয় জাতিসংঘের উদ্যোগে। বিভিন্ন বছর বিভিন্ন প্রতিপাদ্য নেওয়া হলেও এবারের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে, কারণ প্লাস্টিক দূষণ এখন শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, বরং এটি সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিদিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যতোটা না প্রয়োজন, তার চেয়েও বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করছি। বাজারের ব্যাগ থেকে শুরু করে খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, প্রসাধনী, খেলনা— সবকিছুতেই প্লাস্টিকের আধিপত্য। এই প্লাস্টিক ব্যবহারের পর খুব কমই পুনঃব্যবহার করা হয়। বাকিগুলো চলে যায় মাটির নিচে, নদীতে, সাগরে বা জ্বালিয়ে ফেলা হয়, যার ফলে বায়ু দূষণও ঘটে।
অসংখ্য প্রাণী ভুল করে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে, যার ফলে তারা মারা যায়। সাগরে ভেসে থাকা প্লাস্টিক টুকরোগুলো শুধু প্রাণীকেই নয়, পুরো খাদ্য শৃঙ্খলকেই বিষাক্ত করে তোলে। আজ আমরা নিজেরাও অনিচ্ছাকৃতভাবে সেই বিষাক্ত প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছি।
শুধু প্রকৃতি নয়, এই দূষণ আমাদের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থায় প্লাস্টিক জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে, ফসলের জমিতে প্লাস্টিক পড়ে মাটির গঠন নষ্ট করছে, যার ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এই অবস্থায় প্রয়োজন ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে সচেতনতা এবং উদ্যোগ। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব বিকল্প যেমন পাট, কাগজ বা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। সরকারি পর্যায়ে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং শিল্প উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে পরিবেশ রক্ষায়।
শুধু এক দিনের স্লোগান নয়, পরিবেশ দিবস হওয়া উচিত এক গভীর উপলব্ধির দিন— এই পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত হতে হবে সচেতন ও দায়িত্বশীল। প্রতিটি মানুষের ছোট ছোট পদক্ষেপই একসাথে বড় পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
আজকের প্রতিজ্ঞা হোক— প্লাস্টিক নয়, প্রকৃতিকে বাঁচাবো। কারণ পৃথিবীটা আমাদেরই, এবং এটাকে বাসযোগ্য রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
লেখক: সাংবাদিক
এম.কে.