
ছবিঃ সংগৃহীত
যখন যিলহজ মাসের চাঁদ ওঠে, তখন ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোয় ঈদের প্রস্তুতি যেন এক নীরব উৎসবে পরিণত হয়। কুরবানির ঈদ এখানে শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়—এ যেন আত্মিক বিশুদ্ধতা, পারস্পরিক সহানুভূতি আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক জীবনঘনিষ্ঠ অনুশীলন।
ইব্রাহিমি ত্যাগের উত্তরাধিকার
হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সেই ঐতিহাসিক আত্মত্যাগের শিক্ষাই আজ ঠাকুরগাঁওয়ের হাজারো মুসলমানের জীবনে প্রতিবছর ফিরে আসে কোরবানির মধ্য দিয়ে। গরু বা ছাগলের দেহে নয়, বরং এই অঞ্চলের মানুষ তাদের সংকীর্ণতা, অভিমান ও অহংকার কোরবানি দেয় প্রকৃত ঈমানের প্রমাণ রাখতে।
ঠাকুরগাঁওয়ের প্রান্তজনদের ঈদ
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল, হরিপুর কিংবা বালিয়াডাঙ্গীর কোনো গ্রামে ঈদের সকালে শিশুর চোখে যে খুশির ঝিলিক, তা ভাষায় প্রকাশের নয়। এখানকার ঈদ মানেই প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাগাভাগি, দাওয়াত, এবং সহানুভূতির এক অপরূপ নিদর্শন।
স্থানীয়ভাবে পালিত দেশি গরু, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে আদর-যত্নে বড় করা হয়, কোরবানির হাটে নিয়ে যাওয়া—এ যেন এক আবেগঘন যাত্রা।
আধুনিক চ্যালেঞ্জ ও সচেতনতা
তবে ঠাকুরগাঁওয়েও এখন শহুরে প্রভাব প্রবেশ করছে। বড় গরুর প্রতিযোগিতা, ফেসবুকে ছবি আপলোড, দামি পশু এনে বাহাদুরি দেখানোর প্রবণতা কিছুটা হলেও ত্যাগের মূল উদ্দেশ্যকে আড়াল করছে। পাশাপাশি কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আরও সক্রিয় হতে হবে—বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও সদর ও বাজার এলাকায়।
মাংস নয়, তাকওয়ার প্রতিচ্ছবি
কোরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: "তাদের গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।" (সূরা হজ্জ, আয়াত ৩৭)
এ আয়াতের প্রতিফলন ঘটাতে হলে ঠাকুরগাঁওবাসীকেও চাই সচেতন মন, আন্তরিকতা ও আত্মিক প্রস্তুতি। প্রকৃত কোরবানি তখনই হবে সফল, যখন তা হবে হৃদয়ের।
উপসংহার: ঈদ হোক ত্যাগের অনুশীলন। আজ আমাদের প্রয়োজন শহর-গ্রাম নির্বিশেষে কোরবানির আদর্শকে অন্তরে ধারণ করা। ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও যে আন্তরিকতা, সৌহার্দ্য ও ধর্মীয় নিষ্ঠায় ঈদ উদযাপন করেন—তা সারা দেশের জন্য হতে পারে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
লেখক মতামত:
এই ঈদে আসুন, আমরা শুধু পশু নয়—আমাদের ভেতরের রাগ, অহংকার, লোভ ও হিংসাও কোরবানি দিই। তাহলেই ঈদ হবে শুধু একটি উৎসব নয়, হবে আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি।
ইমরান