ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বুটেক্স শিক্ষার্থীদের ভাবনায় পবিত্র ঈদুল আজহা

রাতুল সাহা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২৩:১০, ৬ জুন ২০২৫

বুটেক্স শিক্ষার্থীদের ভাবনায় পবিত্র ঈদুল আজহা

ছবিঃ সংগৃহীত

ঈদুল আজহা ইসলামী সংস্কৃতির এক মহান উৎসব এবং আত্মত্যাগের এক চিরন্তন শিক্ষা বহন করে এই দিনটি। হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-এর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের স্মরণে প্রতিবছর মুসলিমরা এই ঈদ উদযাপন করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই পড়াশোনার জন্য প্রিয়জন থেকে দূরে অবস্থান করে। ঈদুল আজহা তাদের জন্য পরিবারের সাথে সময় কাটানোর, মা-বাবার সান্নিধ্যে কিছুটা প্রশান্তি খোঁজার সুযোগ করে দেয়। অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় অথবা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে গরিব-দুঃখীদের মধ্যে কুরবানির মাংস বিতরণে অংশ নেন। আবার অনেক শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত বা আর্থিক কারণে ঈদের সময় বাড়ি ফিরতে পারেন না। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ কিংবা মেসে থেকে ঈদ উদযাপন করেন। ঈদুল আজহা মানে কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি আত্মত্যাগ, সহানুভূতি, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং পরিবারকে ফিরে পাওয়ার এক মূল্যবান উপলক্ষ। 

এবারের ঈদুল আজহা নিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের ভাবনা তুলে ধরেছেন। চলুন শুনি তাদের কথা -


৪৮তম ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শিহাব বলেন, ঈদুল আজহা আমাদের জন্য শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও আল্লাহর প্রতি গভীর আস্থার প্রতীক। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের স্মরণে আমরা প্রতি বছর কুরবানি করি, যা আমাদের শেখায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু ত্যাগ করাও এক ধরনের ইবাদত। এই ঈদে আমরা পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও সমাজের অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পাই। ঈদের আনন্দ কেবল নতুন পোশাক আর ভালো খাবারে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সবাইকে নিয়ে ভাগ করে নেওয়াতেই এর আসল সৌন্দর্য। কুরবানির মাংস বণ্টনের মাধ্যমে সমাজে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। ঈদুল আজহার মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে ত্যাগের চেতনা জাগ্রত হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যেন সেই চেতনাকে ধারণ করি এটাই হওয়া উচিত ঈদের মূল শিক্ষা। আমরা যেন একে অপরের পাশে দাঁড়াই, ঈদের আনন্দকে ছড়িয়ে দিই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে, তাহলেই ঈদুল আজহার প্রকৃত তাৎপর্য বাস্তবায়িত হবে।

একই ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শিবলি সাদিক উৎপল বলেন, ঈদুল আজহা হলো ত্যাগ, বিশ্বাস আর নিঃস্বার্থতার এক মহৎ শিক্ষা, যেখানে ইব্রাহিম (আ.)-এর নিষ্ঠা আর আল্লাহর প্রতি আনুগত্য আমাদের জীবনে কর্তব্যবোধ, সহমর্মিতা এবং ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা জোগায়। এই ঈদ আমাদের শেখায় প্রকৃত ভালোবাসা মানে নিজের প্রিয় জিনিসকেও মহান উদ্দেশ্যের জন্য উৎসর্গ করতে পারা এবং সমাজে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধ ছড়িয়ে দেওয়া। ঈদুল আজহার তাৎপর্য শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি পরিবার, সমাজ ও আত্মিক আত্মত্যাগ নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনার এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।

৪৯তম ব্যাচের টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ রায়হান ওহি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থা পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। কিন্তু ঈদের সময় পরিবার ও সবার সাথে একসাথে ঈদ করার সুযোগ হয়। আর কাছের মানুষদের সাথে ঈদ উদযাপন করার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। হাটে যাওয়া, ঘুরে ঘুরে গবাদিপশু দেখা ও দামাদামি করে পশু কেনার এক অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায় কুরবানির ঈদে। পশু কেনার পর ঈদের দিন পর্যন্ত পশুকে লালন-পালন করতে করতে পশুর জন্য মায়া জন্মায়। এই মায়া কাটিয়ে প্রিয় পশুটিকে কুরবানি দিতে হয়। এটি এক মহিমান্বিত শিক্ষা যা হযরত ইব্রাহিম (আ.) আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য এই ত্যাগ মহিমান্বিত। ঈদের দিন গবাদিপশু জবাই দেওয়া, মাংস কাটা এবং গরিব ও আত্মীয়দের মাঝে সেগুলো ভাগ করে দেওয়ার কাজ অনেক ভালো লাগে আমার। বিকালে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে নানান প্রকার স্ট্রিটফুড  খাওয়া ও আড্ডা দেয়ার যে আনন্দ তা ঈদ ছাড়া তেমন একটা হয়ে ওঠে না। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একঘেয়েমি দিন শেষে ঈদ আমাদেরকে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে একটা ভালো সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়।

৫০তম ব্যাচের টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাফায়েত হোসেন বলেন, আমার কাছে ঈদুল আজহা মানে নিজেকে প্রশ্ন করার এক উপলক্ষ এবং আমার ভেতরের অহংকার, লোভ আর স্বার্থপরতা কোরবানি দেওয়ার এক সুযোগ। গরু জবাই করা যেন বাহ্যিক রূপ, আসলে জবাই করা উচিত আমাদের ভেতরের পশুত্ব। এই ঈদ আমাকে শিখিয়ে দেয় ত্যাগ কখনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি শক্তির এক পরিণত রূপ। ঈদের দিনে মানুষ যখন নতুন কাপড় পরে, সুগন্ধি মেখে কুরবানির গরুর পাশে দাঁড়ায়, আমি তখন নিজেকে জিজ্ঞাসা করি আমি কি সত্যিই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছু ত্যাগ করেছি? নাকি কেবল দেখনদারির উৎসবে মত্ত? ঈদুল আজহার সৌন্দর্য এখানেই, এটি আমাদের শুধু উৎসব শেখায় না, কীভাবে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করতে হয় সেটাও শেখায়।

আলীম

×