
ছবি: সংগৃহীত
এ যেন দুর্নীতির মডেল। পুরনো ভবনের একতলা জীর্ণদশা ছাদ ভেঙে ওই পিলারের উপরেই তিনতলা স্কুল ভবন করা হয়েছে। এতে নিম্নমানের ইট, খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, পর্যাপ্ত সিমেন্টও ব্যবহার করা হয়নি বলে জানা গেছে। ফ্লোরে ইটের সলিং করে উপরে বালু-সিমেন্ট লেপটে দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পুরনো এক তলা ভবনের ওই কলামের সঙ্গে চিকন রড দিয়ে তিনতলার ছাদ পর্যন্ত করা হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সদরের খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা একটি ভবন নির্মাণে এমন সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম একাধিক প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে এমন ফ্রি-স্টাইল দুর্নীতি দেখতে পেয়ে কাজটি বন্ধ করে দিয়েছেন।
তিনি জানান, আগামী মাসে পটুয়াখালী জেলা সমন্বয় সভায় তিনি বিষয়টি উপস্থাপন করে তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করবেন। বর্তমানে ওই কাজটি বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম কাজল মৃধা জানান, এখানে একটি জীর্ণদশার একতলা ভবন ছিল। যার ছাদ ভেঙে পুরনো পিলারের উপরে তিনতলা পর্যন্ত জোড়া দিয়ে নতুনভাবে আরও দুইতলা করা হয়েছে।
এছাড়া, কার্নিশসহ বীম সব কাজে সীমাহীন দুর্নীতি করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, ‘আমরা শিক্ষকরা কাজের মান ঠিক করতে বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাব কন্ট্রাক্টরসহ তদারকিতে থাকা প্রকৌশলীরা বিষয়টি আমলে নেয়নি।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন এই ভবনটির ডিজাইন কিংবা বরাদ্দসহ ঠিকাদারের নাম ও নির্মাণকাল-কোন কিছুর তথ্য সংবলিত সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। সবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, পুরনো একতলা ভবনের পিলারের উপরে কীভাবে তিনতলা ভবন করা সম্ভব, যেখানে ভবনটি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ব্যবহার করার কথা রয়েছে। এ যেন চুরি নয়, ডাকাতি বললেও ভুল হবে। এছাড়া, পলেস্তারার কাজ তড়িঘড়ি করে সম্পন্নের চেষ্টা করা হয়েছে।
স্থপতি ইয়াকুব খান জানান, কোনো ধরনের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে রাজমিস্ত্রি দিয়ে মানের মাধুরী মিশিয়ে এই ভবনটি করা হয়েছে। এটি বিদ্যালয় ভবন হিসেবে ব্যবহার করলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
কাজের সাইটের নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও মূল ঠিকাদার কিংবা তদারকির দায়িত্বে থাকা কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শ্রমিকরা জানান, সাবকন্ট্রাক্ট হিসেবে কাজটি চলছে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম সরেজমিনে পরিদর্শন করে কাজটি বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয়রা জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
মেজবাহউদ্দিন মাননু/রাকিব