ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রুহুল কবির রিজভী

ভারত বাংলাদেশকে সমমর্যাদার রাষ্ট্র হিসেবে দেখে না

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ৬ জুন ২০২৫

ভারত বাংলাদেশকে সমমর্যাদার রাষ্ট্র হিসেবে দেখে না

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এবারের ঈদুল আযহা হচ্ছে “ফ্যাসিস্ট মুক্ত পরিবেশে”, তবে দেশ এখনো নানাবিধ সংকট ও দুর্ভোগে জর্জরিত। শুক্রবার (৬ জুন) আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, “ভয়, আতঙ্ক, গুম-খুন ও মিথ্যা মামলার আগ্রাসী থাবা থেকে দেশবাসী অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের সকল চিহ্ন মুছে দিয়ে এক নৈরাজ্যিক পরিবেশে ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু অবশেষে ছাত্র-জনতার মিলিত প্রতিরোধের মুখে তার পতন হয়েছে।”

তিনি বলেন, “নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকেরা মনে করে জনগণকে দমন করে ক্ষমতায় থাকা যায়, কিন্তু ইতিহাস বলছে—তাদের পরিণতি হয় বেদনাদায়ক ও অপমানজনক।”

রিজভী বলেন, “গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর সমর্থনে প্রতিষ্ঠিত। জনগণ সরকারের কাছে বিশাল কিছু প্রত্যাশা না করলেও আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা রাখে।”

তবে তিনি অভিযোগ করেন, “ঈদের সময়েও রাজধানী থেকে বের হওয়া যাত্রীবাহী গাড়িগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা বিলম্বিত হচ্ছে। ২০-২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এর ওপর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এখন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এখনও চাঁদাবাজি ও আগের শাসনামলের দখলদারিত্বের চিত্র স্পষ্ট।”

তিনি বলেন, “সারাদেশে ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত আগস্ট থেকে চলতি মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। পুলিশ এখনো প্রো-অ্যাকটিভ ভূমিকা নিচ্ছে না।”

ঢাকা মহানগরীর পরিস্থিতিকে ‘ছিনতাইয়ের স্বর্গরাজ্য’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “মোহাম্মদপুর, মিরপুর, এমনকি মগবাজারে প্রকাশ্যে কিশোরদের আঘাত করে সর্বস্ব লুটে নেওয়া হচ্ছে। মব ভায়োলেন্স বেড়েছে। সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ফ্যাসিবাদের শেষ বছরের তুলনায় অপরাধের হার বেড়েছে ৬.১৬ শতাংশ।”

বিএনপি নেতা বলেন, “জনগণকে নিরাপদ রাখতে সরকারের কোনো ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।”

রিজভী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “গত মে মাসে বিএসএফ নির্মমভাবে ৬ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবাসন চুক্তি না মেনেই প্রতিদিন শত শত ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণের পরিপন্থী।”

তিনি বলেন, “ভারত বাংলাদেশকে সমমর্যাদার রাষ্ট্র হিসেবে দেখে না। পুশ-ইন, সীমান্ত হত্যা, পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা সবই বাংলাদেশকে চাপের মধ্যে রাখার মাস্টার প্লানের অংশ।”

রিজভী অভিযোগ করেন, “ঈদের একদিন আগেও দেশের বহু কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়নি। স্বল্প আয়ের শ্রমজীবীরা কষ্টে দিন যাপন করছে। সরকারের উচিত ছিল বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শ্রমিকদের পাওনা নিশ্চিত করা।”

তিনি বলেন, “একটি জনসমর্থিত সরকারের প্রথম দায়িত্বই হবে শ্রমজীবীদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা। অথচ সরকার নির্বিকার ও উদাসীন।”

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “অপরাধ দমন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও প্রতিবেশী সম্পর্কের ক্ষেত্রে জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”

আবির

আরো পড়ুন  

×