ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

টাকা না থাকলেও স্বপ্ন ছাড়েননি! ছেলের জন্য সাইকেলে ২০০ কি.মি পাড়ি দিলেন বাবা

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:০৪, ৬ জুন ২০২৫

টাকা না থাকলেও স্বপ্ন ছাড়েননি! ছেলের জন্য সাইকেলে ২০০ কি.মি পাড়ি দিলেন বাবা

ছেলে যেন মানুষ হয়, ভালোভাবে লেখাপড়া করে এই স্বপ্ন নিয়েই সংগ্রামী বাবা মো. রাজু ছুটলেন ঢাকার মহাখালী থেকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী। একটুখানি ভালোবাসা আর একচিলতে হাসির জন্য পেরিয়ে গেলেন প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ, ছেলের উপহার একটি সাইকেল নিজেই চালিয়ে বাড়ি পৌঁছানোর দুর্ভেদ্য সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।

রাজু ঢাকার নাখালপাড়া লুকাস মোড়ে গত ১৫ বছর ধরে রিকশা চালান। বাড়ি গাইবান্ধার তালুকজামিরা ফকিরহাটে। এক ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট সংসার। নিজের ও পরিবারের খরচ বাঁচিয়ে এক মাস আগে ছেলের জন্য একটি সাইকেল কিনলেও সেটি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ভাড়া জোগাতে পারেননি।

ঈদের আগের হিসাব মিলিয়ে দেখেন পকেটে আছে মাত্র ২ হাজার ২০০ টাকা। বাসে যেতে লাগবে প্রায় ২ হাজার টাকা, আর সাইকেল পাঠাতে আরও তিন হাজার। এত খরচে সম্ভব নয় তাই সিদ্ধান্ত নেন, নিজেই সাইকেল চালিয়ে বাড়ি যাবেন।

গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ভোর ৫টায় রাজু রওনা দেন মহাখালী থেকে। দিনভর রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে টানা ২১ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে মধ্যরাতে পৌঁছান বগুড়ার ঠেঙ্গামারা এলাকায়। সেখানেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট আল ফাহাদ তাকে থামান। মধ্যরাতে সাইকেল আরোহী দেখে জিজ্ঞাসাবাদের পর রাজুর সংগ্রামের গল্প শুনে মুগ্ধ হন তিনি।

মানবিক বিবেচনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রাজুকে খাবার দেওয়া হয় এবং নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিতে ট্রাকের ব্যবস্থা করা হয়।

রাজু বলেন, ‘পথে কয়েক জায়গায় ৫০ টাকা করে ভ্যানে উঠেছি। যমুনা সেতু সাইকেল নিয়ে পার হতে পারছিলাম না, পরে ১০০ টাকা দিয়ে একটি মিনি ট্রাকে উঠি। কিন্তু বেশি ভাড়া না দিতে পারায় তারা নামিয়ে দেয়। ভাবিনি এত পথ পাড়ি দিতে পারব। তবে ছেলের মুখের হাসির জন্য সব কষ্ট স্বার্থক মনে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটা আমি কখনও ভুলব না। তাঁদের সহযোগিতায় এবার সত্যিকারের ঈদের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।’

রাজুর এই অদম্য ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ আর সংগ্রাম শুধু একটি পরিবারের গল্প নয়, এ যেন সব বাবার ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।

মিমিয়া

×