ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদে কতটুকু মাংস খাবেন, হজমে সমস্যা হলে কী করবেন, পুষ্টিবিদের পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৭ জুন ২০২৫

ঈদে কতটুকু মাংস খাবেন, হজমে সমস্যা হলে কী করবেন, পুষ্টিবিদের পরামর্শ

ছবি: প্রতীকী

কোরবানির ঈদ মানেই ঘরে ঘরে গরু, খাসি, ভেড়া কিংবা মহিষের মাংসের বাহারি আয়োজন। খাবার টেবিলে থাকে পোলাও, বিরিয়ানি, রেজালা, কোরমা আর সাথে বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট। ঈদের আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ এই মাংস খাওয়া হলেও, অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে নানা হজমের সমস্যা।

পুষ্টিবিদদের মতে, কোরবানির ঈদের সময় মাংস বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু অতিরিক্ত মাংস গ্রহণ অনেক সময় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে উপযুক্ত পরিমাণে খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

কতটুকু মাংস খাবেন?

পুষ্টিবিদরা বলছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রোটিন চাহিদা তার ওজনের প্রতি কেজিতে ১ থেকে ১.৫ গ্রাম। অর্থাৎ, যার ওজন ৫০ কেজি, তার দৈনিক প্রোটিন প্রয়োজন ৫০-৭৫ গ্রাম। এই প্রোটিন মাছ, ডিম, দুধ, ডাল বা বাদামের পাশাপাশি মাংস থেকেও পাওয়া যায়।

১০০ গ্রাম হাড় ছাড়া গরুর মাংসে প্রায় ২০-২৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। তাই ঈদের দিনেও একজন সুস্থ মানুষ চাইলে ১০০ থেকে ১২৫ গ্রাম মাংস খেতে পারেন। তবে যাদের ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ বা হার্টের অসুখ আছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাংসের পরিমাণ ঠিক করতে হবে।

মাংসের উপকারিতাও আছে

গরুর মাংসে থাকে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, হিম আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি২, বি৩, বি৬ ও বি১২। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

এছাড়া মাংসে থাকা লিনোলিক অ্যাসিড ক্যানসার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও সহায়তা করে। তবে গরুর মগজ ও কলিজায় কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো।

হজমে সমস্যা হলে করণীয়

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাংসে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ও ফ্যাট থাকায় এটি হজমে সময় নেয়। তাই হজম ঠিক রাখতে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়ের কথা বলছেন তারা:

পেঁপে: এতে থাকা ‘প্যাপেইন’ এনজাইম দ্রুত মাংস হজমে সাহায্য করে। তাই সালাদের সঙ্গে পেঁপে রাখা যেতে পারে।

আনারস: এতে থাকা ‘ব্রোমেলেইন’ প্রোটিন ভাঙতে সহায়ক। খাবারের পর কিছুটা আনারস খেলে উপকার পাওয়া যায়।

দই: দইয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা হজমে সহায়তা করে। মিষ্টি দই না খেয়ে টক দই খাওয়াই উত্তম।

বোরহানি: কোল্ড ড্রিংকসের পরিবর্তে বোরহানি খাওয়াও হজমে সহায়ক।

কীভাবে খাবেন?

পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, মাংসের সঙ্গে প্রচুর শাকসবজি ও সালাদ খেতে হবে। সাদা চালের পোলাও বা পরোটা-লুচির চেয়ে বরং বাদামি চালের ভাত বা আটার রুটির সঙ্গে মাংস খাওয়া ভালো। ডেজার্ট যেমন পায়েস, ফিরনি, কাস্টার্ড, জর্দা কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ঈদের আনন্দ যাতে সুস্থতার আনন্দে রূপ নেয়, সে জন্য খাবারে ভারসাম্য রাখা জরুরি। আর হজমে সমস্যা বেশি হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।

রাকিব

×