ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বজরা শাহী মসজিদ: মোগল স্থাপত্যের এক জীবন্ত ইতিহাস

নাজমুল হাসান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা,

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ৬ জুন ২০২৫

বজরা শাহী মসজিদ: মোগল স্থাপত্যের এক জীবন্ত ইতিহাস

নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক নিদর্শনের নাম বজরা শাহী মসজিদ। মোগল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত এই মসজিদটি কেবল ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।

ইতিহাসের পাতা থেকে...

বজরা শাহী মসজিদ নির্মিত হয় ১৭৪১–৪২ খ্রিস্টাব্দে, মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের শাসনামলে। স্থানীয় জমিদার আমানউল্লাহ তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মধ্যে জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ এবং তাঁর পুত্র মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন করেন। তৎকালীন সময়ে ইউরোপ থেকে আনা টাইলস ও সিরামিকের কাজ মসজিদটিকে আরও দৃষ্টিনন্দন করে তোলে।

স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শন

মসজিদটির স্থাপত্যে মোগল আমলের জ্যামিতিক নিখুঁততা এবং নান্দনিকতা স্পষ্ট। আয়তাকার মসজিদটির পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি মূল প্রবেশদ্বার এবং মাথার উপর রয়েছে তিনটি গম্বুজ। মাঝের গম্বুজটি তুলনামূলকভাবে বড় এবং পাশে দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট। চার কোণায় রয়েছে আটভুজাকৃতির বুরুজ। বাইরের দেয়ালে সিরামিকের মোজাইক ও রঙিন টাইলসের কাজ যে কোনো দর্শনার্থীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

অবস্থান ও যাতায়াত ব্যবস্থা

বজরা শাহী মসজিদটি সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নে অবস্থিত। মাইজদী শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। সড়কপথে চৌমুহনী হয়ে সহজেই যাওয়া যায়। এছাড়া, কাছাকাছি রয়েছে বজরা রেলস্টেশন, যেখান থেকে পায়ে হেঁটে বা অটোতে যাতায়াত করা যায়।

ধর্মীয় ও পর্যটন গুরুত্ব

এ মসজিদে প্রতিদিনই স্থানীয় মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে থাকেন। বিশেষ করে জুমার দিন ও ঈদের সময় মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় লক্ষণীয়। পাশাপাশি, ইতিহাসপ্রেমী এবং স্থাপত্যরসিক দর্শনার্থীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

সংরক্ষণের উদ্যোগ

বর্তমানে বজরা শাহী মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনস্থ সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত। তবে স্থানীয়দের দাবি, এই ঐতিহাসিক মসজিদটির আরও যত্নবান সংরক্ষণ এবং পর্যটন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রয়োজন।

বজরা শাহী মসজিদ কেবল একটি প্রাচীন উপাসনালয় নয়, এটি বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্পকীর্তির জীবন্ত সাক্ষ্য। প্রাচীন এই স্থাপনাটি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের গর্ব, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।

মিমিয়া

×