
ছবিঃ দৈনিক জনকণ্ঠ
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিকে ঘিরে ঈদ আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া মানুষে এসব স্থানে সৃষ্টি হয়েছে উপচে পড়া ভিড়। জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো থেকে শুরু করে বিনোদন পার্ক ও নদীপাড়—সবখানেই দেখা গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
সাপাহারের পাহাড়ি এলাকা, পোরশার সীমানা ঘেঁষা ছোট সোনামসজিদ,সাপাহারের জবই বিল, নিয়ামতপুরের ঘুঘুডাঙা, ধামইরহাটের আলতাদীঘি, বদলগাছীর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, মান্দার কুসুম্বা মসজিদ, পতিসর রবীন্দ্র কাচারী বাড়ি, পত্নীতলার নন্দনকানন পার্ক, আব্দুল জলিল শিশু পার্ক, জেলা পরিষদ পার্ক, হাসাইগাড়ি বিলসহ জেলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পর্যটন এলাকা ও বিনোদোন পার্কগুলোতে ভ্রমণপিপাসুদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশের টহল ও স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি যানজট ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে কঠোরতা।
নওগাঁ সদর থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রাবেয়া সুলতানা বর্ষা বলেন,“ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে পাহাড়পুরে আসতে পেরে দারুণ ভালো লাগছে। বইয়ে পড়েছিলাম এই বৌদ্ধবিহারের কথা, কিন্তু নিজ চোখে দেখে ইতিহাস যেন জীবন্ত হয়ে উঠলো। এখানকার খোলা আকাশ, সবুজ প্রান্তর আর প্রাচীন স্থাপত্য মিলে এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। শিশুদের জন্যও এটি একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানার জন্য এমন জায়গায় নিয়মিত পর্যটনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। আশা করি, সরকার এই জায়গাটিকে আরও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন করে তুলবে। চারপাশের পরিবেশ খুব সুন্দর, তবে ভিড় একটু বেশি।”
মান্দার কুসুম্বা মসজিদে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসা আকাইদ হাসান বলেন, “ঈদের ছুটির আনন্দকে একটু ভিন্নভাবে উপভোগ করতে আমরা বন্ধুরা মিলে এসেছি ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদে। প্রাচীন এই মসজিদের স্থাপত্য দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছি। কয়েকশ বছরের পুরনো নিদর্শন হয়েও এতটা সৌন্দর্য ধরে রেখেছে—তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ইতিহাস, ধর্মীয় গুরুত্ব আর স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য মিশ্রণ এই স্থান। যদি কিছু মৌলিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়, তাহলে এই জায়গাটি আরও অনেক পর্যটকের মন জয় করবে।”
স্থানীয় হকাররা জানাচ্ছেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনায় বিক্রি বেড়েছে।বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী, ফুচকা, চটপটি, আইসক্রিমসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে লম্বা লাইন দেখা গেছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের ছুটি উপলক্ষে এমন জনসমাগম স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং অনেক জায়গায় পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি পর্যটকদের বিরক্ত করছে বলেও কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন।
নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ আলী জনকণ্ঠকে বলেন, “নওগাঁর প্রত্নতাত্ত্বিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দর্শনীয় স্থানগুলোকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে জেলা প্রশাসনের বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। যাতে শুধু বিশেষ দিন নয় সারা বছরই দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে।"
সব মিলিয়ে এবারের ঈদে নওগাঁর দর্শনীয় স্থানগুলো যেন পরিণত হয়েছে উৎসবমুখর মিলনমেলায়।
পৃথী