
ছবি: সংগৃহীত
শিক্ষা ও সাক্ষরতা একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিত্তি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু ব্যক্তির বিকাশেই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক কল্যাণেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। যদিও বিভিন্ন দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন ও মান ভিন্ন হয়, তবুও একটি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে এর শিক্ষার গুণগত মানের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনের মতে, শিক্ষা ও সাক্ষরতা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। এটি লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাড়ায় এবং জীবনমান ও কর্মসংস্থানের সুযোগ উন্নত করে। বিখ্যাত অধিকারকর্মী নেলসন ম্যান্ডেলা একবার বলেছিলেন, “শিক্ষা হল সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যা ব্যবহার করে আপনি বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারেন।”
কিভাবে দেশগুলোকে শিক্ষার ভিত্তিতে র্যাংকিং করা হয়?
প্রতি বছর US News & World Report, BAV Group এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের Wharton School যৌথভাবে 'Best Countries Report' প্রকাশ করে, যেখানে বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার বিস্তারিত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়। এই প্রতিবেদনে ৭৮টিরও বেশি দেশের হাজার হাজার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়:
-
একটি উন্নত পাবলিক শিক্ষা ব্যবস্থা
-
বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার আগ্রহ
-
উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান
এই তিনটি বৈশিষ্ট্যকে সমান গুরুত্ব দিয়ে চূড়ান্ত র্যাংকিং তৈরি করা হয়।
২০২৩ সালের গ্লোবাল র্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বের সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার দেশগুলো:
র্যাংক | দেশ |
---|---|
১ | দক্ষিণ কোরিয়া |
২ | ডেনমার্ক |
৩ | নেদারল্যান্ডস |
৪ | বেলজিয়াম |
৫ | স্লোভেনিয়া |
৬ | জাপান |
৭ | জার্মানি |
৮ | ফিনল্যান্ড |
৯ | নরওয়ে |
১০ | আয়ারল্যান্ড |
দক্ষিণ কোরিয়া: সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার শীর্ষে
দক্ষিণ কোরিয়া বছরের পর বছর ধরে শীর্ষে রয়েছে। এর কারিকুলাম অত্যন্ত কঠোর, শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স উঁচু এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের মানও বিশ্বমানের। কোরিয়ান সমাজে শিক্ষাকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়, এবং শিক্ষার্থীরা প্রায়শই “হাগওন” নামক অতিরিক্ত স্কুলে ক্লাস করে নিয়মিত পড়াশোনার বাইরে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর শক্ত অবস্থান
ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও স্লোভেনিয়ার মতো ইউরোপীয় দেশগুলোও তালিকার ওপরের দিকে অবস্থান করেছে। কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষা, ন্যূনতম টিউশন ফি এবং বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস জীবনের কারণে এগুলো জনপ্রিয় গন্তব্য।
জাপান ও জার্মানি: উদ্ভাবন ও কাঠামোগত শৃঙ্খলা
জাপান ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে, এর প্রযুক্তিনির্ভর ও নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা পদ্ধতির জন্য। অন্যদিকে, জার্মানির দ্বৈত শিক্ষা ব্যবস্থা (ক্লাসরুম শিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণের সমন্বয়) এটিকে অনন্য করেছে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
একটি শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা একটি দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি। শিক্ষা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্ভাবনী, উৎপাদনশীল এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। শিক্ষা র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলো স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি ও শাসনব্যবস্থায়ও এগিয়ে।
বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শিক্ষায় বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিতেই হবে। আপনি যদি বিদেশে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হন কিংবা নীতিনির্ধারক হিসেবে দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চান, তাহলে কোন দেশগুলো সেরা শিক্ষা দেয় – তা জানা অত্যন্ত দরকারি।
“জ্ঞানই শক্তি”—এই বাস্তবতায় বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার দেশগুলোই এগিয়ে থাকবে। দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা মডেল থেকে শুরু করে ফিনল্যান্ডের শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক পদ্ধতি পর্যন্ত – এই দেশগুলো শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষতার বৈশ্বিক মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
আবির