
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই দীর্ঘ ছুটিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে গভীর নীরবতা । বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে অবস্থান করছে নিজ নিজ বাড়িতে।
তবে এই ছুটির মাঝেও নোবিপ্রবির একঝাঁক শিক্ষার্থী রয়ে গেছেন ক্যাম্পাসে, পাশাপাশি অবস্থান করছে কয়েকজন বিদেশি শিক্ষার্থী । তাদের কেউ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, কেউবা সেমিস্টার ফাইনালকে সামনে রেখে বইয়ের পাতা উল্টে চলেছেন নিয়মিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব শিক্ষার্থীর কাছে পড়াশোনা এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য অর্জনই এখন সবচেয়ে বড় বিষয়। পারিবারিক দৈন্যতা কিংবা ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার চিন্তা বিভিন্ন কারণেই এভাবেই বাড়িতে না গিয়ে ঈদ কাটিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে।
ঈদের উৎসবের দিনগুলোতে পরিবার থেকে দূরে থাকা কষ্টসাধ্য হলেও, তারা মনে করছেন এ ত্যাগই একদিন তাদের সাফল্যের পথে সহায়ক হবে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর আকাঙ্ক্ষা থাকলেও স্বপ্ন পূরণের সংকল্পে আপস করতে রাজি নন তারা।
এমনই হলে অবস্থানরত অর্থনীতি ২০১৮-১৯ সেশনের এক শিক্ষার্থী এস.এম.আশরাফুল আলম যায়েদ শাহ জানান: ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা আর পারিবারিক দৈন্যতা, এই দুয়ের মিশেলে যে বিষণ্ণতা তা রুদ্ধ করে দেয় পরিবারিক ঈদানন্দ। তাই বাড়িতে যাওয়া হয়ে উঠে না, ঈদ পরবর্তী আসন্ন বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতির দিক চিন্তা করে হলেই থেকে যাওয়া। গতবারের ন্যায় এবারও হল প্রশাসন আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য খাসির ব্যবস্থা করেছে। ঈদের নামাজ শেষে সবাই মিলে একসাথে মাংস কাটা, কুশলাদি বিনিময়ের মাধ্যমে উদযাপিত হবে আমাদের আবাসিক ঈদ উদযাপন।
এছাড়াও হলে অবস্থানরত কৃষি বিভাগের একজন বিদেশি শিক্ষার্থী রাভি ইয়াদাভ জানান:
আমি একজন হিন্দু, তাই ব্যক্তিগতভাবে ঈদ উদ্যাপন করি না, তবে আমার মুসলিম বন্ধুদের জন্য এই উৎসবের গুরুত্ব আমি গভীরভাবে সম্মান করি। এটা আমার প্রথম ঈদ নয় বাড়ির বাইরে, তাই এখন এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
যদিও আমি সরাসরি ঈদ উদ্যাপন করছি না, তবুও চারপাশে যে উৎসবের আমেজ, তা উপভোগ করি। বাংলাদেশে থাকার ফলে আমি বিভিন্ন সংস্কৃতি ও রীতি কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি, যা আমি সত্যিই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করি। ছুটির এই সময়টা আমি শান্তভাবে কাটাচ্ছি—নিজেকে একটু বিশ্রাম দেওয়ার এবং পুনরায় শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ হিসেবে নিচ্ছি।
ফলিত গণিত ১৪ তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী বলেন:
এইবার প্রথমবারের মতো ঈদ বাড়ির বাইরে কাটাচ্ছি। আমি একজন শিক্ষার্থী, এবং ঈদের কিছুদিন পরেই আমার এবং আমার স্টুডেন্টদের পরীক্ষা রয়েছে—তাই চিন্তা করলাম, এবার বাড়ি না যাওয়াই ভালো। সাধারণত বাড়ির বাইরে ঈদে ভালো লাগে না, তবে এখানকার নিয়মিত বিদ্যুৎ সুবিধা একটি ভালো দিক। তারপরও মনটা খারাপ লাগছে, কারণ বাড়ি পাবনায়—দূরত্ব অনেক বেশি, যাতায়াতে ভোগান্তিও কম নয়। পরিবার ছাড়া ঈদের আনন্দ যেন পূর্ণতা পায় না, কিন্তু বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
হলে অবস্থানরত অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ক্যাম্পাসের পরিবেশ কিছুটা ফাঁকা হলেও সহপাঠীদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন তারা। ভবিষ্যতের স্বপ্নপূরণে পরিবার ছাড়ার এই চ্যালেঞ্জ তারা নিয়েছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে, হৃদয়ে ভালোবাসা ও দায়িত্বের অনুভব নিয়ে।
শিক্ষার্থীদের এ অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে নোবিপ্রবি প্রশাসন হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের জন্য একটি খাসি কুরবানির ব্যাবস্থা করেছেন। যাতে সকল শিক্ষার্থীরা কুরবানির আমেজে ঈদ উদযাপন করতে পারে
Jahan