
প্রতীকী ছবি
গ্রামে এবং শহরে ঈদ উদযাপন ভিন্ন হয়ে থাকে। গ্রামে ঈদুল আজহা মানে শুধুই একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি একটি আবেগঘন মিলনমেলা—যেখানে ধর্মীয় দায়িত্ব, সামাজিক সংহতি ও পারস্পরিক ভালোবাসা মিলেমিশে তৈরি করে এক অপূর্ব চিত্র।
ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই জমজমাট হয়ে ওঠে গরু ছাগলের হাট। শহরের চেয়ে গ্রামের হাটগুলো হয় প্রাণবন্ত। কেউ যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে মজার অভিজ্ঞতা নিতে। পশু কেনা, দামাদামি, ওজন মাপা—সব মিলিয়ে অন্য রকম উত্তেজনা। বাড়িতে পশু আসার পর এলাকার শিশুরা দল বেঁধে সেটিকে দেখতে আসে, খাওয়ায়, নাম রাখে।
গ্রামে ঈদের দিন সকালেই ঈদগাহ মাঠে জড়ো হন সবাই। পরিচিত-অপরিচিত সবাই নামাজ শেষে কোলাকুলি করে, শত্রুতা ভুলে একাকার হয় ভালোবাসায়। নতুন জামা, আতর আর হাস্যোজ্জ্বল মুখ—গ্রামের ঈদগাহ যেন হয়ে ওঠে মিলনের সবচেয়ে বড় আসর।
নামাজ শেষে শুরু হয় কুরবানি। বাচ্চারা আগ্রহভরে তাকিয়ে থাকে। কুরবানির মাধ্যমে মানুষ শুধু ধর্মীয় দায়িত্বই পালন করে না, বরং সমাজের দরিদ্র অংশের প্রতিও দায়িত্ব পালন করে। অনেক গ্রামে দেখা যায়—কেউ নিজে কুরবানি দিতে না পারলেও প্রতিবেশীর দানে তার ঘরেও মাংস পৌঁছে যায়।
পশু জবাই শেষে গ্রামের ছোট বড় সবাই দল বেঁধে মাংস কাটে, ভাগ করে, প্যাকেটিং করে তা দরিদ্র পরিবারে বিলিয়ে দেয়। আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই মাংস পায়, এমনকি অনেক সময় গ্রামের বাইরের মানুষকেও দেওয়া হয়। এটি এক প্রকার মানবিক সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ।
আবার ঈদের বিকেল মানেই দাওয়াতের ধুম। প্রতিবেশীর ঘরে দাওয়াত খাওয়া, শিশুদের হৈ চৈ, মাঠে খেলাধুলা—সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দের রঙ আরও গাঢ় হয়। আর সন্ধ্যায় চায়ের দোকান বা বারান্দায় হয় দীর্ঘ আড্ডা, গল্প, হাসি।
গ্রামের কুরবানির ঈদ যেন ধর্মীয় ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ঐক্যের এক অনন্য উদাহরণ। এখানে কারো আনন্দ একার নয়, বরং সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মাঝেই থাকে ঈদের আসল সৌন্দর্য।
সাব্বির