
নামায পরবর্তীতে বাংলাদেশিদের সাথে মুঠোফোন বন্ধি
ঈদ শুধু একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি হাসতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায় এবং ত্যাগের মহিমা বোঝায়। ঈদের আমেজ, অনুভূতি, সংস্কৃতি আর রীতিনীতি আমাদের একে অপরের সাথে মেলবন্ধন ঘটায়। ত্যাগ, সংযম আর আত্মশুদ্ধিই ঈদের প্রকৃত তাৎপর্য বয়ে আনে।
আমার শিক্ষা জীবনের জন্য বিগত চারটি ঈদুল ফিতর এবং এবারই প্রথম ঈদুল আজহা পরিবার, বাবা-মা, ভাই, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনদের ব্যতীত উদযাপন করতে হলো। পরিবার ও প্রিয়জনদের অনুপস্থিতিতে সবচেয়ে বড় উৎসব পালন করা নিঃসন্দেহে আমার জীবনে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে বাবার সাথে ঈদের সকালে একসাথে ঈদগাহে নামাজ আদায়, মমতাময়ী মায়ের হাতের রান্না করা বিভিন্ন খাবার, এবং ঈদের সকালের ঈদগাহে যাওয়ার আগের প্রস্তুতি — এসব স্মৃতি বারবার চোখের কোণে কড়া নাড়ে, মনকে ভীষণ ব্যাকুল করে তোলে।
স্থানীয় মসজিদে ইদের নামাযকালীন ও নামায শেষ সময়ে, শরবতে মোহাব্বত ও মিষ্টান্ন বিতরনের সময়
তবে, পরিবার বা প্রিয়জনদের ব্যতীত ঈদ উদযাপন হলেও, এখানে পড়াশোনার সুবাদে বিশ্বের বিভিন্ন গোত্রের, বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা ও সহপাঠীদের সাথে ঈদ উদযাপন মন্দ নয় বৈকি। বিশেষ করে, ফ্ল্যাটমেটদের সাথে ঈদের পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি, বাজার করা, এবং খাবার তালিকা তৈরি — সবকিছুই পরিবারে থাকার মতো অনুভব করায়। বিগত চার বছর ধরে বাংলাদেশি সহপাঠীদের সাথে ঈদের প্রস্তুতি ও আয়োজনে অংশ নিয়ে মনে হয়েছে যেন আমি পরিবারেই অবস্থান করছি।
ঈদের দিন সকালে স্বাভাবিকভাবেই পূর্বনির্ধারিত অ্যালার্ম সেট করে রেখেছিলাম। ঘুম থেকে উঠে আরও একটি ঈদের সকাল পাওয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। আমার সহপাঠী ফ্ল্যাটমেটরা অন্য ধর্মাবলম্বী হলেও, ঈদের নামাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে আমাকে প্রতিবারের মতো এবারও সাহায্য করেছে। যথারীতি আমার রুমমেট সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে সেমাই এবং ক্ষীর রান্না করেছিলো। তা সামান্য খেয়ে, ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিধান করে, সুগন্ধি মেখে, জায়নামাজ হাতে নিয়ে স্থানীয় মসজিদের উদ্দেশ্যে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের জন্য রওনা হই। সকাল ৭:৩০টায় (স্থানীয় সময়) পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ আদায় শেষে স্থানীয় মুসলমান, বাংলাদেশি অন্যান্য সহপাঠী, জুনিয়র অনেকেই কোলাকুলি করেন। মসজিদ থেকে ঈদের নামাজ শেষে প্রতিবারের ন্যায় 'শরবতে মোহাব্বাত' নামে পানীয় ও মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয় ঈদের নামাজে উপস্থিত সকলের জন্য। ঈদের নামাজ শেষে পরিচিতদের সাথে ছবি তোলা যেন ঈদের আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। যথারীতি আমিও ছবি তুললাম। অবশেষে বাসায় এসে ফ্ল্যাটমেটদের সাথে ছবি তোলা হলো, কুশল বিনিময় ও কোলাকুলি হলো।
ইদ উপলক্ষে নিজেদের রান্না করা খাবার সেমাই,ক্ষীর, মুরগির মাংস, খাসির মাংস, পোলাও
দেশের বাইরে পড়াশোনার সুবাদে রান্না করার অভিজ্ঞতা আমাদের বেশ ভালোই আছে বটে। পরিকল্পনা মাফিক ঈদের খাবার রান্নার জন্য ফ্ল্যাটের সবাই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম। রান্না হলো যথারীতি — পোলাও, মুরগির মাংস, খাসির মাংস। সাথে সালাদ ও কোমল পানীয়। খাবার পরিবেশনের পর একসাথে বসে তৃপ্তি সহকারে খাবার শেষ করলাম। দেশের বাইরে ঈদ হওয়ায় এবং শুধুমাত্র ঈদের দিন বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকায়, রুমের মাঝেই একে অপরের সাথে আড্ডা, বিশ্রাম এভাবেই ঈদুল আজহার দিনের বাকি সময় অতিবাহিত হয়েছে।
দেশের বাইরে জাত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র উপেক্ষা করে সকল বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা ঈদের আনন্দ একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে থাকি। একে অপরকে নিমন্ত্রণ করা, কুশল বিনিময়, বিশেষ মুহূর্তগুলো মুঠোফোনে বন্দি করা, জুনিয়রদের ঈদের সালামি দেওয়া, নিজেদের ছোটবেলার অতীত ঈদ স্মৃতিচারণ করা — ইত্যাদি সচরাচর হয়ে থাকে।
পরিশেষে বলবো, ঈদের আনন্দ – ত্যাগ, শিক্ষা ও মূল্যবোধ আমাদের সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সুসম্পর্ক গড়ে তুলুক। মহান আল্লাহ আমাদের সকলের ত্যাগ ও সৎকর্মগুলো কবুল করুন। "তাক্বাবাল্লালাহু মিন্না ওয়া মিনকুম"। নিন্দনীয় এবং অন্যের ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সকলকে তৌফিক দান করুন।
আমরা যারা দেশের বাইরে পড়াশোনা করি, তাদের সকলের জন্য আপনাদের সকলের দোয়া ও প্রার্থনা কামনা করি। নিঃসন্দেহে আপনাদের দোয়া ও প্রার্থনা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের পথের পাথেয়। পবিত্র ঈদুল আজহা আপনার, আমার, আমাদের সকলের জীবনে অনাবিল আনন্দ, সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও ভালোবাসা বয়ে নিয়ে আসুক এমন কামনা করি। আবারও সকলকে পবিত্র ঈদুল আজহার অনেক অনেক আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।
সাব্বির