
ছবি: সংগৃহীত
চীনের দুটি ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্পের মধ্যে বৃহত্তমটির নতুন একটি ছবি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে, যা এ পর্যন্ত পাওয়া বিমানের সবচেয়ে স্পষ্ট সামনের দৃশ্য তুলে ধরেছে। অজ্ঞাতনামা এই যুদ্ধবিমানটির ছবি দূর থেকে দীর্ঘ লেন্সে ধারণ করা হয়েছে, যেখানে এর তিনটি উন্মুক্ত নিচের দিকের অস্ত্র বহনকারী বেলি দেখা যাচ্ছে। এই অস্ত্র কক্ষগুলো সম্মিলিতভাবে ফিফথ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান যেমন এফ-৩৫ বা জে-২০ এর তুলনায় বহুগুণ বেশি সংখ্যক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিমানটির নাকের বিশাল কন যেটি আশপাশে থাকা মানুষদের তুলনায় স্পষ্ট বোঝা যায়, তা প্রায় নিশ্চিত করে যে, এতে বিশ্বের যেকোনো যুদ্ধবিমানের তুলনায় অনেক বড় এবং শক্তিশালী রাডার ব্যবহৃত হচ্ছে। ছবিতে আরও দেখা গেছে, মূল অস্ত্র কক্ষের উভয় পাশে দুটি ছোট অস্ত্র কক্ষও রয়েছে, যেগুলোতে নতুন প্রজন্মের পিএল-১৬ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইলের মতো হালকা অস্ত্র বহনের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিমানটির নিচের অংশে আরও অস্ত্র কক্ষ থাকতে পারে, যেখানে রোটারি অস্ত্র র্যাকের ব্যবস্থা থাকতেও পারে, যা অতিরিক্ত গোলাবারুদ বহনের সুযোগ তৈরি করবে।
এই যুদ্ধবিমানে বড় অভ্যন্তরীণ অস্ত্র কক্ষ, উন্নত সেন্সর ব্যবস্থা এবং প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি ধারণের সক্ষমতা রয়েছে— যা সাধারণ আকারের যুদ্ধবিমানের তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা দেয়। অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাণাধীন ষষ্ঠ প্রজন্মের এফ-৪৭ যুদ্ধবিমানও আকারে বিশাল হবে, তবে এখন পর্যন্ত কেবল চীনের প্রকল্পগুলোর প্রোটোটাইপ বিমানগুলোই পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সাম্প্রতিক ছবিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এই নতুন যুদ্ধবিমানটি একটি টুইন-সিটার বা দ্বৈত পাইলট কনফিগারেশন ব্যবহার করছে, যেখানে পাইলটরা পাশাপাশি বসে। দুটি আলাদা হেডস-আপ ডিসপ্লের সবুজ প্রতিফলন এটি নিশ্চিত করে। এই ধরনের ককপিট ডিজাইন চীনের বর্তমান J-20, J-16, J-10C ও JF-17 ব্লক ৩ যুদ্ধবিমানেও দেখা যায়।
এই দ্বৈত পাইলটের নকশা এমন সব বিমান মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলো দীর্ঘ সময় ও দূরত্বের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হবে। যদিও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি এবং এআই ব্যবহারে অগ্রগতি হচ্ছে, তবুও ষষ্ঠ প্রজন্মের এসব বিমানের জটিল অপারেশন পরিচালনায় একটি পাইলটের একার পক্ষে তা সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন এই বিমানটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (Pacific Theatre) দীর্ঘ পাল্লার গমনক্ষমতা ও স্ট্রাইক ক্ষমতার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইনের বাইরেও কার্যক্রম চালাতে পারবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের জন্য এ অঞ্চলে শক্তি প্রদর্শন ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
এই নতুন যুদ্ধবিমানটিকে অনেকেই J-36 নামে অভিহিত করছেন, যদিও সরকারিভাবে এখনও এর নাম বা শ্রেণি ঘোষণা করা হয়নি। তবে প্রযুক্তি, অস্ত্র ও আকারের দিক থেকে এটি যে চীনের সামরিক বিমানবাহিনীর এক যুগান্তকারী সংযোজন হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ফারুক