ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সন্তানের খাদ্যাভ্যাসে মা-বাবার প্রভাব: গবেষণায় মিলল আশ্চর্য তথ্য

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ৮ জুন ২০২৫

সন্তানের খাদ্যাভ্যাসে মা-বাবার প্রভাব: গবেষণায় মিলল আশ্চর্য তথ্য

ছবি: সংগৃহীত

শুধু মায়ের নয়, সন্তানের খাবারের পছন্দ-অপছন্দ তৈরিতে বাবার ভূমিকাও যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—তা উঠে এসেছে একটি নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। গবেষকরা বলছেন, বাবার কিশোর বয়সের খাদ্যাভ্যাস ভবিষ্যতে তার সন্তানের খাদ্যচর্চায় দৃশ্যমান প্রভাব ফেলতে পারে।

বাবা কী খাচ্ছেন, তার ছায়া পড়ে সন্তানের প্লেটে

যদি আপনি বাবা হয়ে নিজে অনিয়মিত বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খান আর সন্তানকে শুধুই সবজি খেতে বাধ্য করেন, তাহলে তার সুফল মিলবে না বলেই মত গবেষকদের। বরং কিশোর বয়স থেকেই যদি একজন পুরুষ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন, তবে ভবিষ্যতে বাবা হওয়ার পর তা সন্তানের খাদ্যচর্চায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

গবেষণার মূল কথা

বস্টন কলেজের গবেষকরা পরিচালিত এই গবেষণায় অংশ নেন ৬৬৯ জন পুরুষ। তাদের কিশোর বয়সের খাবারের অভ্যাস সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হয় এবং পরে সন্তান হওয়ার পর তারা সন্তানদের খাবার বিষয়ে কেমন আচরণ করছেন, তাও বিশ্লেষণ করা হয়।

গবেষণার প্রধান মারিয়ানে এইচ. ডি অলিভেইরা বলেন, ‘যেসব পুরুষ কিশোর বয়সে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েছেন, তারা পরে বাবা হয়ে সন্তানদের মাঝেও সেই অভ্যাস গড়ে তুলতে বেশি সক্রিয় ছিলেন। তারা নিজেরাই স্বাস্থ্যকর খাবারের আদর্শ হিসেবে কাজ করেছেন এবং শিশুর অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার বিষয়েও নজরদারি করেছেন।’

কোন ধরনের খাদ্যাভ্যাসের কী প্রভাব?

গবেষণায় দেখা যায়—

  • কিশোর বয়সে যাদের খাদ্যমান উন্নত হয়েছে, তারা বাবা হওয়ার পর—
    • ৯০% বেশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
    • ৬০% বেশি সন্তানের খাবার গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেছেন।
    • তাদের সন্তানেরা ফল ও সবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্য নির্দেশিকা অনুসরণে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে।

অন্যদিকে, যাদের কিশোর বয়সে খাদ্যমান ছিল খারাপ বা সময়ের সঙ্গে খারাপ হয়েছে, তাদের সন্তানরাও ততটা স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ঝোঁক দেখায়নি।

কিশোরদের পুষ্টিতে বিনিয়োগ জরুরি

গবেষকরা বলছেন, এই ফলাফল একদিকে যেমন কিশোরদের পুষ্টির গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

‘কিশোর বয়সে গড়ে ওঠা স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস পরবর্তী প্রজন্মের পুষ্টির উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। এটা মাথায় রাখা জরুরি যে, আজকের কিশোররাই ভবিষ্যতের বাবা,’ বলেন ডি অলিভেইরা।

পারিবারিক খাবার যথেষ্ট নয়

অবাক করার মতো তথ্য হলো, নিয়মিত পারিবারিক খাবারের টেবিলে বসা কিশোরদের পরবর্তী জীবনে খাদ্যাভ্যাসে উন্নতি আনে—এমন কোনো স্পষ্ট সম্পর্ক গবেষণায় পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, কী খাচ্ছেন তা আরও গুরুত্বপূর্ণ।

এই গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সন্তানের খাদ্যাভ্যাস শুধু মায়ের দায়িত্ব নয়, বাবারও। আর তা শুরু হয় অনেক আগে, কিশোর বয়স থেকে। তাই যদি সুস্থ প্রজন্ম গড়তে চান, তবে আজ থেকেই কিশোরদের—বিশেষ করে ছেলেদের—খাদ্যচর্চা নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।

 

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

 

রাকিব

×