ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অঙ্কুরিত আলু, পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়া কতটা নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

প্রকাশিত: ১০:০৬, ৮ জুন ২০২৫

অঙ্কুরিত আলু, পেঁয়াজ ও রসুন খাওয়া কতটা নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

ছবিঃ সংগৃহীত

রান্নাঘরে রাতের খাবার তৈরির সময় হয়তো আপনি গিয়ে দেখলেন আলুতে অঙ্কুর গজিয়েছে। এমন অবস্থায় প্রশ্ন জাগতেই পারে—এই আলু কি খাওয়া যাবে, নাকি সরাসরি ফেলে দেওয়া উচিত?

শুধু আলু নয়, পেঁয়াজ ও রসুনের মতো সবজিগুলোতেও মাঝে মাঝে অঙ্কুর দেখা যায়। এসব অবস্থায় কী করা উচিত, তা সব সময় সোজাসাপ্টা নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের ওপর।

কেন অঙ্কুরিত হয় আলু, আর তাতেই বা কী সমস্যা?

আলু মূলত একটি কন্দজাত উদ্ভিদ। যথেষ্ট আলো, উষ্ণতা এবং সময় পেলে এটি থেকে নতুন গাছ জন্মাতে শুরু করে, অর্থাৎ অঙ্কুরোদগম হয়। এই প্রক্রিয়ায় আলুতে ‘গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড’ নামক বিষাক্ত রাসায়নিকের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত উপাদান ‘সোলানাইন’, যা ছত্রাক ও পোকামাকড় থেকে গাছকে রক্ষা করে, কিন্তু মানুষের জন্য হতে পারে ক্ষতিকর।

সোলানাইন বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বিভ্রান্তি এবং গুরুতর ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা মৃত্যুও ঘটতে পারে। যদিও এই ধরনের বিষক্রিয়া বেশ বিরল, তবুও সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিংকনের গবেষক ড. ক্রিস বিশপ বলছেন, অঙ্কুরিত আলুতে গ্লাইকোঅ্যালকালয়েডের মাত্রা অনেক বেশি হয়, যা আলুকে তিক্ত করে তোলে এবং অনেক সময় বমির কারণ হতে পারে। তাঁর মতে, যদি অঙ্কুরিত অংশটি কেটে ফেলা হয় এবং আলু শক্ত থাকে, তবে তা খাওয়া যেতে পারে। তবে সবুজ বর্ণের আলু একেবারেই খাওয়া উচিত নয়।

যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সিও (FSA) একই ধরনের সতর্কতার কথা বলেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, যদি অঙ্কুরিত আলুতে পচনের লক্ষণ না থাকে এবং তা শক্ত থাকে, তবে অঙ্কুরিত অংশ বাদ দিয়ে রান্না করা যেতে পারে। তবে আলু যদি নরম, কুঁচকে যাওয়া বা সবুজ রঙের হয়, তবে তা ফেলে দেওয়াই উত্তম।

ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার অধ্যাপক ক্যাথি মার্টিন আরো কড়াভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অঙ্কুরিত ও সবুজ আলু খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।” কারণ আলো ও তাপের সংস্পর্শে আলুর মধ্যে সোলানাইনের পরিমাণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।

কী করবেন অঙ্কুরিত আলু দেখলে?

  • অঙ্কুরিত স্থানটি কেটে ফেলুন, তবে যদি অঙ্কুরটি অনেক বড় (১ ইঞ্চির বেশি) বা আলু নরম হয়ে যায়, তাহলে ফেলে দিন।

  • সবুজ অংশ দেখা গেলে অবশ্যই ফেলে দিন।

  • পচন, ছত্রাক বা দুর্গন্ধ থাকলে সেই আলু ব্যবহার করবেন না।

  • গর্ভবতী, শিশু বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য এই আলু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

পেঁয়াজ ও রসুনের ক্ষেত্রে কী করবেন?

পেঁয়াজ ও রসুনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আলুর মতো ততটা জটিল নয়। অধ্যাপক ক্যাথি মার্টিন বলেন, “এই সবজিগুলোর অঙ্কুরোদগমে সাধারণত বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে না।” তবে এগুলো অঙ্কুরিত হলে স্বাদ তেঁতো হতে পারে এবং নরম হয়ে যেতে পারে।

সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন পেঁয়াজ ও রসুনকে ঠাণ্ডা, শুষ্ক ও অন্ধকার জায়গায় রাখা এবং কখনোই সিল করা প্লাস্টিকের ব্যাগে না রাখার।

শেষ কথা

অঙ্কুরিত আলু খাওয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। দৃশ্যত ভালো থাকলেও ভেতরে ক্ষতিকর রাসায়নিক জমা হতে পারে। অন্যদিকে, পেঁয়াজ ও রসুন তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হলেও তাদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারেও কিছু সতর্কতা মানা উচিত। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সচেতন ব্যবহারের বিকল্প নেই।

আলীম

×