
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত কুড়িগ্রাম জেলার দুটি উপজেলা—রৌমারী ও রাজিবপুর—দীর্ঘদিন ধরে ভৌগোলিকভাবে মূল জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রশাসনিকভাবে কুড়িগ্রামের অংশ হলেও এই দুই উপজেলা বাস্তবে শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রম,আইনি সুবিধা ও ভোট দেয়া ছাড়া , ব্যাবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব কাজই পরিচালনা করে জামালপুর জেলার সঙ্গে। এর পেছনে প্রধান কারণ ব্রহ্মপুত্র নদের স্বাভাবিক প্রবাহ এবং চরাঞ্চলের বিস্তার, যা কুড়িগ্রামের মূল ভূখণ্ড থেকে এই অঞ্চলকে আলাদা করে রেখেছে।
নদী ও সড়ক পথ মিলিয়ে রাজিবপুর থেকে কুড়িগ্রাম সদরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার, আর রৌমারী থেকে ৮০ কিলোমিটার। ভরা বর্ষায় নদী পেরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ, আর শুকনো মৌসুমে দীর্ঘ চরাঞ্চল পার হতে হয় পায়ে হেঁটে—যা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ, রয়েছে ডাকাতের ঝুঁকিও। ভরা বর্ষায় যখন নদী টইটুম্বুর , তখন রাজিবপুর থেকে চিলমারী ঘাটে নৌকায় যেতে লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। এরপর চিলমারী থেকে আরও দের দুই ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় কুড়িগ্রামে।
তবে এই দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগের প্রেক্ষাপটে কিছুটা আশার আলো নিয়ে এসেছে চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হওয়া। এই ফেরি চলাচলের ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী পেরোনোর সুবিধা কিছুটা বেড়েছে এবং যোগাযোগে সাময়িক স্বস্তি মিলেছে। চিলমারী ঘাট থেকে রৌমারী পর্যন্ত ফেরি চলাচলের ফলে পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে কিছুটা গতি এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তবু ফেরি সার্ভিস স্থায়ী সমাধান নয়। শুষ্ক মৌসুমে চরের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয় এবং অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা ও সময় অপচয় থেকে যায়। ফলে এখনো রৌমারী ও রাজিবপুরবাসীর চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রশাসনিক সেবা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম মূলত জামালপুর জেলার উপর নির্ভর করেই চলছে।
ব্রহ্মপুত্র নদ এখানে শুধু একটি প্রাকৃতিক সীমারেখা নয়, এটি যেন একটি উন্নয়ন বিভাজন রেখা। এই বিভাজন ঘোচাতে স্থানীয়রা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় একটি সেতু নির্মাণ, টেকসই সড়ক অবকাঠামো এবং জরুরি সেবা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
ফেরি চালু হওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও রৌমারী ও রাজিবপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের ভৌগোলিক বঞ্চনার স্থায়ী সমাধান নয়। এই জনপদগুলিকে কুড়িগ্রামের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বাস্তবিক অর্থে সংযুক্ত করতে এখনই প্রয়োজন দূরদর্শী পরিকল্পনা, টেকসই অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
সাব্বির